ব্রিটেনের সবথেকে ধনী পরিবার হল হিন্দুজা পরিবার। তাদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ৩৭ বিলিয়ন ইউরো বা ভারতীয় মুদ্রায় ৩৯৩২৩৪.৫২ কোটি টাকা! এহেন হিন্দুজা পরিবারের বিরুদ্ধেই তাদের গৃহ পরিচারক-পরিচারিকাদের বিরুদ্ধে অমানবিক ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। মানব পাচারের অভিযোগে সুইজারল্যান্ডে বিচার চলছে হিন্দুজা পরিবারের চার সদস্য – প্রকাশ হিন্দুজা, তাঁর স্ত্রী কমল, তাঁদের ছেলে অজয় এবং তাঁর স্ত্রী নম্রতার বিরুদ্ধে। শুনানির সময় অভিযোগ উঠেছে, ভারত থেকে আনা গৃহ পরিচারক-পরিচারিকাদের হিন্দুজারা যত টাকা মাইনে দিতেন, তার থেকে অনেক বেশি অর্থ তাঁরা খরচ করতেন তাঁদের পোষা কুকুরের পিছনে!
গত সোমবার থেকে সুইজারল্যান্ডে এই মানব পাচারের বিচার শুরু হয়েছে। শুনানির সময়, সরকার পক্ষের আইনজীবী দাবি করেছেন, এই ধনকুবের পরিবার ভারতীয় গৃহকর্মীদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করত। হিন্দুজাদের বাড়িতে যে কর্মচারীরা কাজ করতে আসত, তাদের পাসপোর্ট নিয়ে জমা রেখে দেওয়া হত। চাইলেই হিন্দুজাদের বাড়ি থেকে পালানোর উপায় ছিল না। হিন্দুজাদের অনুমতি ছাড়া তাদের বাড়ি থেকে বের হওয়াই নিষিদ্ধ ছিল। এছাড়া, কর্মচারীদের ভারতীয় মুদ্রায় বেতন দেওয়া হত। ফলে, তাদের কাছে সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা থাকত না। কাজেই, ওই দেশে তাদের নিজেদের মতো কিছু কেনাকাটা করার বা কোথাও যাওয়ার স্বাধীনতাও ছিল না। ভারতীয় মুদ্রা সেখানে চলে না।
সেই সঙ্গে, ভারতীয় কর্মচারীদের বেতনও দেওয়া হত অত্যন্ত কম। সরকার পক্ষের আইনজীবীর দাবি, হিন্দুজারা তাদের পোষা কুকুরের পিছনে, তাদের একজন কর্মীর থেকে বেশি খরচ করত। এক মহিলা কর্মচারীর উদাহরণও পেশ করা হয় আদালতে। সুইজারল্যান্ডের লেক জেনেভা এলাকার একটি ভিলার মালিক হিন্দুজারা। সেই ভিলায় কাজ করতেন এক ভারতীয় মহিলা। সপ্তাহে ৭দিন, প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা করে কাজ করতে হত তাঁকে। দিন প্রতি তাঁর বেতন ছিল ভারতীয় মুদ্রায় ৭০০ টাকা। সুইজারল্যান্ডের মুদ্রায় হিসেব করলে, মাত্র ৭ সুইস ফ্রা। অন্যদিকে, তাদের কুকুরের জন্য বছরে হিন্দুজারা ৮,৫৮৪ সুইস ফ্রা, অর্থাৎ, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে।
স্বাভাবিকভাবেই হিন্দুজা পরিবার এই সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, সব কর্মচারীদেরই যথাযোগ্য মর্যাদা এবং সম্মান দেয় তারা। কাজের সময়কে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে তারা। সাতদিন ১৫-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয় না তাদের গৃহকর্মীদের। তাদের বেতনও অনেক কম দেখানো হয়েছে। হিন্দুজাদের আইনজীবী দাবি করেছেন, বেতন ছাড়াও তাদের থাকার এবং খাওয়ার ব্যবস্থাও হিন্দুজারাই করে। তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা হয় বলে, সাক্ষ্যও দিয়েছে বেশ কয়েকজন কর্মচারী। যে মহিলা কর্মীর উদাহরণ দিয়েছে সরকার পক্ষ, তিনি লেক জেনেভায় স্বেচ্ছায় চাকরি নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি। তিনি আরও জানান, ভারতে তিনি যা বেতন পেতেন, তার থেকে হিন্দুজারা তাঁদের বেশি অর্থ দেন।
আদালতে অজয় হিন্দুজা জানিয়েছেন, কর্মচারীদের কাজের অবস্থা সম্পর্কে তাঁর কাছে সব খবর ছিল না। হিন্দুজা গ্রুপের ভারতীয় শাখাই এই নিয়োগের বিষয়গুলি দেখত। তিনি জানিয়েছেন, এখন কর্মতারীদের বেতন নিয়ে আর কোনও সমস্যা নেই। সমস্ত নিয়োগ এখন স্থানীয়ভাবেই করা হয়। একটি তৃতীয় পক্ষের সংস্থা এই বিষয়টি দেখছে। অজয় ও নম্রতা আদালতে হাজিরা দিলেও, বয়স ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে আদালতে আসেননি প্রকাশ (৭৮ বছর) এবং কমল হিন্দুজা (৭৫ বছর)। বিচারে তাঁরা দোষী সাব্যস্ত হলে, কিন্তু এই বয়সে তাঁদেরও জেল খাটতে হতে পারে। সরকার পক্ষের আইনজীবী প্রকাশ ও কমলের সাড়ে পাঁচ বছর এবং অজয় ও নম্রতার সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন। আদালতের খরচের জন্য ১ মিলিয়ন সুইস ফ্রা (ভারতীয় মুদ্রায় ৯ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকারও বেশি) এবং কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ তহবিলে ৩.৫ মিলিয়ন সুইস ফ্রা (ভারতীয় মুদ্রায় ৩৩ কোটি টাকার বেশি ) প্রদানের দাবিও করেছেন।
Comments