মঙ্গলবার রাতে কসবা থানায় ছাত্র মৃত্যুর অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করে। রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের আধিকারিকরা সেদিন স্কুল পরিদর্শনে যায়।
ইতোমধ্যে স্কুলের আরো একজন ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ আগামীকাল আরো কয়েকজন পড়ুয়ার সঙ্গে পুলিশ কথা বলবে, এমনটাই জানা গেছে।
গতকালই এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিন সদস্যের বোর্ড গঠন হয়। ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ছাত্রের চোয়াল ও শরীরের ডান দিকের একাধিক হাড় ভেঙেছে বলে জানা গিয়েছে।
কমিশনের প্রতিনিধিরা জানায় শিশুটির চাপা রাগ বা অভিমান থেকে এই মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কারণ সে ছোটবেলায় তার মাকে হারায় এবং তার বাবাও বদমেজাজি বলে জানা যায়। কিন্তু উল্টোদিকে শেখ শানের বাবা, স্কুল কর্তৃপক্ষের দিকে নানা অভিযোগ তুলছে, সঙ্গে শিশু কমিশনের অনুমান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।
মনোরোগ চিকিৎসক জানাচ্ছেন যে, শিশুদের মধ্যে ডিপ্রেশন দিনকে দিন বাড়ছে। সে কারণ কি শুধুই বাইরে স্কুল থেকে হচ্ছে নাকি বাড়ির পরিবেশও দায়ে ? শিশুরা অনেকটা সময় স্কুলে সময় কাটাচ্ছে। তাই শিক্ষক/ শিক্ষিকাদের পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য কেমন আছে জানতে হবে।
কলকাতার বিভিন্ন নাম করা বেসরকারি স্কুলে চায়েল্ড কাউন্সেলর নিযুক্ত করা হয়েছে যারা ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের মা-বাবাদেরও কাউন্সেলিং করতে পারেন। কিন্তু সরকারি স্কুলগুলিতে তা সম্ভব না, শিক্ষকদেরই কাউন্সেলিং করতে হবে পড়ুয়াদের।
এই সময়ের বাচ্চাদের মানসিকতা অনেক পাল্টেছে। আগেকার দিনে কিছু রাগী এবং বদমেজাজি শিক্ষক যেভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর দৈহিক ও মানসিক অত্যাচার করতেন, আইনত তা এখন বন্ধ হয়েছে বটে। তবে বকবে না, বা ভুল ধরবে না এমনটা ধরে নিয়ে ভুল বা অন্যায় করলে, পড়াশুনায় গাফিলতি দেখলে যদি তাঁরা বকাবকিও করেন, ছাত্র-ছাত্রীরা ভেবে নিচ্ছে, শিক্ষক বা শিক্ষিকা তাদের 'অপমান' করলেন। শিশুদের এমন বাহ্যিক আত্মমর্যাদার প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা কিন্তু পরোক্ষে তাদেরই ক্ষতি করছে।
শিশুদের মানসিকতায় চারিত্রিক যে দুর্বলতার চিহ্নগুলি ফুটে উঠছে, তার জন্যে কে বা কারা দায়ী? অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া-র প্রতি শিশুদের আসক্তিকে কারণ হিসেবে সামনে রাখছেন। কিন্তু শিশুদের অভিভাবকেরা কি একেবারেই দায়মুক্ত তাঁদের সন্তানদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের অবকাশগুলি সংকীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে ? সম্ভবত নয়। এই বিষয়ে তাঁদেরও কিছু দায়ভার রয়ে যায়।
শাসানকে শাস্তি দাওয়া হয়েছিল, সে অঙ্ক হোমওয়ার্ক করেনি বলে। তাই কি সে রেগে পাঁচ তোলায় গিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিলো তার জীবনের সাথে ?
পড়ুয়ার বাবা শেখ পাপ্পু বার বার স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পরিবর্তন করা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তিনি আরও দাবি করেন যে স্কুল কর্তৃপক্ষ টাকা দিয়ে শিশু কমিশনের মত বদলে দিচ্ছে। ১৬ বছরের শানের কীভাবে মৃত্যু হল তা জানতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় চিকিৎসকের দল ও ময়নাতদন্তকারী।
এমন মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষিতে বলতেই হয় যে, বাচ্ছাদের মধ্যে মানসিক সুস্থতার বিষয়টিকে তার নিজের পরিবারের লোককে আগে দেখতে হবে। শুধু আদর-ভালবাসায় সন্তান প্রতিপালন সম্ভব নয়। শিশুদের সমস্যাগুলি বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। শুধু স্কুলের উপর অভিযোগ আরোপ করলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না।
এই আচম্বিক শোকের বাতাবহে প্রমাণ ছাড়া শেষ কথা বলে দেওয়া একেবারেই অভিপ্রেত নয়। কারণ, পুলিশ এখনো তদন্ত চালাচ্ছে শেখ শানের রহস্য মৃত্যু নিয়ে। এই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটনা প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর বাবা-মাকে আতঙ্কিত করে তুলছে।
Commentaires