ধুপগুড়ি এবং
নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে বিজেপি যে বিশাল ভোট মেসিনে জেতার নিশ্চয়তা এতদিন বানিয়ে রেখে ছিল, তা আর বিশেষ ফলপ্রসূ হচ্ছে না। ত্রিপুরা এবং উত্তরাখণ্ডে নিজেদের দাপটটুকু বজায় রেখেছে বটে, কিন্তু আর কোথাও নয়।
তবে তার চেয়েও করুন অবস্থা বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের। সেই ভোটে একমাত্র কেরালা ছাড়া বামফ্রন্টের পাওনা শূন্য। কিন্তু আগেকার দুই ‘লাল দুর্গ বলে পরিচিত ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট নিষ্প্রভ। কংগ্রেসও বিশেষ সুবিধার অবস্থায় নেই।
পশ্চিমবঙ্গে গত আড়াই বছরে পাঁচটি ভোট হয়েছে। সেই ভোটে শূন্য ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষ করে বামফ্রন্টের ক্ষেত্রে আর একটু গভীরে বিশ্লেষন করে দেখা যাচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণ ভাগে বামফ্রন্ট যতটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে নতুনভাবে, উত্তরবঙ্গে কিন্তু তার এক ভগ্নাংশও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
এখানে একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। গঙ্গা নদীর দুইও পারে – মুর্শিদাবাদ এবং মালদহে কংগ্রেস এখনও কিন্তু জীবিত। তবে বামফ্রন্টের পাশাপাশি কংগ্রেসও ক্রমশ যথেষ্ট দুর্বল হয়ে গেছে উত্তরবঙ্গে।
এই যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে বাম ও কংগ্রেস শিবিরে, তা ভরাট করবার পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে বিজেপি।
ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একমেবাদ্বিতীয়ম বিজেপি – যার প্রধান মুখ হিসেবে দেখা যাচ্ছে এমন একজনকে, যিনি কয়েক বছর আগে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে গালভরা ভাষণ দিতেন, যা আজও দেন। তবে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের প্রশংসার থেকেই তার মুখে নিত্যই শোনা যায় শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিন্দা।
বস্তুত, এই দিকটি নিয়ে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। ধুপগুড়িতে যে প্রার্থীকে বিজেপি আসরে তুলেছে, সেই মিতালি রায়কে বিজেপি-র স্বভাবমতো কার্যত তৃণমূল থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে আশা হয়েছে। ধুপগুড়ির ভোটদাতাদের কাছে এই ‘নোংরামি’ আদৌ পছন্দ হয়নি। তাঁরা মিনতি রায়কে নস্যাৎ করে তৃনমূলের প্রার্থী নির্মল রায়কে নির্বাচিত করেছেন।
বিজেপি-র বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।। কারণ, হিন্দুত্ব জাতিয়তাবাদী বিজেপি যে মগজধোলাই করাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে গত নয় বছরে, তা আর কতটা কাজ করবে, তা নিয়ে বিজেপি-র অন্দরেও যথেষ্ট সন্দেহ জাগছে। প্রচারের সবটুকু আলো নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কে বাত’-ও বিশেষ পৌঁছাচ্ছে না মানুষদের কানে।
অথচ, কংগ্রেস, এবং বিশেষ করে বামশক্তি, নরেন্দ্র মোদীর এই শূন্যগর্ভ প্রচারের বিরুদ্ধে নতুন প্রচার তৈরির ক্ষেত্রটিকে এখনও ব্যবহার করতে পারেনি। I.N.D.I.A. জোটের ঘোষণায় আরএসএস-বিজেপি যেভাবে বিচলিত হয়ে ‘ভারত’ নামটিকে সামনে তুলে ধরেছে, তাতেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে সাধারণ মানুষদের সামনে নরেন্দ্র মোদীর নতুন কিছু বলবার নেই।
আপাতত, ১৮ই সেপ্টেম্বরে ডাকা বিশেষ সংসদ অধিবেশনের দিকে চোখ থাকবে সবার। কারণ এই অধিবেশনের কোনো অ্যাজেন্ডা প্রকাশ্যে আসেনি এখনও। এমনটা বলা যেতে পারে যে ‘এক দেশ এক ভোট’-এর দাবি নিয়ে বিজেপি হয় ভোটটিকে আগামী তিনটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে জুড়ে দিতে চাইবে। নয়তো, সাংবিধানিক প্রশ্ন তুলে নির্বাচন প্রক্রিয়াটিকেই ভণ্ডুল করতে চাইবে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্যে।
Comments