জীবনানন্দ দাশের কবিতায় গভীর অন্ধকারে প্রকৃতির অনন্য রূপবর্ণনা পড়েছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তবাসী নিম্ন-আয়ের মানুষ যারা, তাদের জীবনে যে গভীর অন্ধকার ঘনিয়েছে তা আর কহতব্য নয়। দিন এনে দিন খাওয়াটাই যাঁদের জীবনের কঠোর বাস্তব, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষদের অভাব বাড়ছে, বাড়ছে ক্ষোভও।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল যখন বিজেপি-র পক্ষে গেল না, তারপর থেকেই দেখা গেল রাজ্য সরকারকে ‘টাইট’ দেওয়ার জন্যে কেন্দ্রীয় সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। এবং তার প্রথম নিদর্শন হিসেবে বন্ধ করে দিয়েছে ১০০ দিনের কাজের জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ।
গতকাল বৃহস্পতি বার, ২১শে সেপ্টেম্বর অত্যন্ত স্পষ্টভাষায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা এবার সহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
আগামী ২রা অক্টোবর নতুন দিল্লীতে ধর্নার বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে উনি বলেন যে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং-এর কাছে এই বিষয়ে এতদিন যা আবেদন করা হয়েছে, তার কোনো জবাব আসেনি। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী যদি সাক্ষাতের সময় না দেন, তাহলে তাঁর দফতরের সামনে ২রা অক্টোবর ধর্না বসবে।
আগামী ২রা অক্টোবর নতুন দিল্লীতে তৃণমূল কংগ্রেস যে ধর্নার ডাক দিয়েছে তা মুলত একটি দাবি ঘিরেই। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া অর্থ দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
বৃহস্পতিবার দিল্লীতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং-কে লোকসভার কক্ষে দেখেন, তখন এক বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেন যে বকেয়া অর্থ বিষয়ে উনি যেন সাক্ষাতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।
ট্রেজারি বেঞ্চে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পাশে বসতে দেখা যায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরে তৃণমূল সাংসদ জানান যে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আগামী ৩রা অক্টোবর উনি বসবেন কিনা। তার জবাবে গিরিরাজ সিং জানান যে ৩ তারিখ উনি ছত্তিসগড়ে নির্বাচনের প্রচারে যাবেন।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদের বক্তব্য, “মানরেগা (মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট) মোতাবেক বাংলার ব্লকেয়া নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যাোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন”
কয়েক মাস আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কৃষিভবনে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান, তখন কৃষিমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছিল, মন্ত্রী অফিসে নেই, বিহারে চলে গেছেন।
এইভাবে এড়িয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী কি অত্যন্ত অশুভ বার্তা দিচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের অভাবী মানুষদের? রাজ্যের যতটুকু অধিকার বা বকেয়া, তা মিটিয়ে না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রচারে সময় ও অর্থ ব্যয় করলেই কি সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হবে? পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা জানতে চাইছেন।
Comments