ব্রিটেনের নির্বাচনে (UK election) লেবার পার্টির ঝড়। ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অবশেষে হার মেনে নিতে হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টিকে। পরাজয় মেনে নিয়েছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী সুনাক (Rishi Sunak)। কিন্ত কেন একযুগেরও বেশি সময় পরে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হল তাঁর দলকে? এক নয়, এর পিছনে রয়েছে একাধিক ফ্যাক্টর।
ধীর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি
এটাই সুনাক সরকারের পরাজয়ের সবচেয়ে কারণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। গত কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ধীর গতি অস্বস্তিতে ফেলেছে ব্রিটেনকে। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত অর্থনীতির দেশগুলির তুলনায় অর্থনৈতিক বৃদ্ধির এই শম্বুক গতি চূড়ান্ত আকার ধারণ করে গত বছর। ২০২৩ সালে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হয় মাত্র ০.১ শতাংশ। যার ফলে তৈরি হতে থাকে মন্দা।
মুদ্রাস্ফীতির আস্ফালন
২০২২ সালের অক্টোবরে ৪০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে ব্রিটেনের মুদ্রাস্ফীতি। সম্প্রতি তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও দীর্ঘ সময় ধরে ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। যার ফলে ব্রিটেনের মানুষ আরও বেশি গরিব হয়ে পড়তে থাকেন। উলটো দিকে সুনাকের সম্পদ ফুলেফেঁপে উঠেছে। ঝাঁ চকচকে স্য়ুট ও অ্যারিস্ট্রোক্রেট জীবনযাত্রার সঙ্গে অবচেতনেই দূরত্ব করে ফেলেছিল জনতা। এর ফলে ক্রমশ ক্রোধ বেড়েছে সাধারণ মানুষের।
জন পরিষেবার অবনমন
একসময় ব্রিটেনের স্বাস্থ্য পরিষেবা সারা বিশ্বের কাছে একটা দৃষ্টান্তস্বরূপ ছিল। কিন্তু সেই পরিষেবা ক্রমশই নিম্নমুখী হয়েছে। সাধারণ নাগরিকদের পড়তে হয়েছে প্রবল সমস্যায়। সময়মাফিক ও সাশ্রয়ী চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না তাঁরা। আর এই কারণেই কনজারভেটিভ পার্টিকে জনরোষের মুখে পড়তে হয়েছে এনএইচএসকে ঠিকভাবে চালিত না করতে পারার অভিযোগে।
গত কয়েক বছরে অস্বাভাবিক হারে অভিবাসন সংখ্যা বেড়েছে ব্রিটেনে। তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান-সহ বিশ্বের বহু দেশ থেকে অভিবাসীদের চাপে পড়তে হয়েছে সেদেশের মানুষকে। ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে হাজার হাজার মানুষের ব্রিটেনে ঢুকে পড়ছে। যা নিয়ে লেবার-কনজারভেটিভ দ্বৈরথ ছিল তুঙ্গে। বিশেষ করে ‘অনুপ্রবেশকারী’দের রোয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য সুনাক সরকারের আনা আইন নিয়ে টোরিদের মধ্যেই মতবিরোধ ছিল। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ব্রিটিশ জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বলছেন, সুনাক বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছেন। তাঁর রোয়ান্ডা প্ল্যান, অর্থনৈতিক সংস্কার ও স্বাস্থ্য পরিষেবায় লক্ষ লক্ষ অভিবাসীরা যে চাপ তৈরি করছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। একই সঙ্গে ব্রিটিশদের একাংশ মনে করছে, টোরি জমানায় অভিবাসনের ঠেলায় জনবিন্য়াসে বদল আসতে চলেছে।
Comments