শিরোনামের ঘটায় মণিপুর এখন কেন্দ্রবিন্দুতে নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ, মণিপুর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে আসাম এবং ত্রিপুরায় বিজেপি পাঁচিল তুলে রেখেছে। যে সংবাদে দলটি উপকৃত হবে, সেগুলিই সাধারণ ভারতবাসীর চোখে আসবে। বাকি যা কিছুতে বিজেপি বিচলিত হয়, তা দমিয়ে রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটি বরাবরই করে এসেছে।
মণিপুরও বিজেপি-র দখলে। বা বলা ভালো, মেইতেই উপজাতির বিজেপি-র দখলে। কারণ, কুকি উপজাতিরা যে বিজেপি দলের হয়ে বিধায়ক হন, সেই বিজেপি দলই কিন্তু তার কুকি বিধায়ক ভুংজাগিন ভাল্টে ও তাঁর পরিবারের উপর আক্রমণ হানে।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিং-এর পদত্যাগের জন্যে জোরদার আন্দোলন হওয়া সত্ত্বেও বিজেপির স্থানীয় মেইতেই গোষ্ঠীর নেতারা এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রী অতি-সক্রিয় হয়ে সেই আন্দোলনকে ধামাচাপা দেয়। কিন্তু ছাই চাপা দিলেই যে আগুন নিভে যায় না, তা সম্ভবত বর্তমান নেতা-নেত্রীরা বুঝেও বোঝেন না।
বেশ কিছুদিন ধরে মণিপুর থেকে বিশেষ কোনো সংবাদ না আসবার ফলে মেইতেই-কুকি সংঘর্ষের কথা যে মানুষ ভুলে গেছে এমন ভাবনার অবকাশ নেই। যদিও জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন, ইণ্ডিয়া-ভারত নাম বিতর্ক অথবা ‘এক দেশ এক ভোট’-এর জিগির তুলে মণিপুরকে ভুলিয়ে রাখবার সযত্ন এক প্রয়াস করা হয়েছে, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।
দগদগে ঘায়ের মধ্যে নুনের ছিটে দেওয়ার মতো সম্প্রতি অজ্ঞাত-পরিচয় জঙ্গিদের গুলিতে তিন কুকি উপজাতির মানুষ মারা গেলেন। মণিপুর গোয়েন্দার রিপোর্ট অনুযায়ী, দুটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য আন্দোলনকারীদের ভিড়ে মিশে বিক্ষোভকে হিংসাত্মক করে তুলছে।
মেইতেই বিধায়কদের সঙ্গে কুকি বিধায়কদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসাবার পর থেকেই মণিপুরের পরিস্থিতি ঘোরালো হতে থাকে। বিজেপি দলের নির্বাচিত সদস্য হলেও দুই উপজাতির মানুষ নিজেদের জাতিস্বত্বাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সেই কারণেই মণিপুরে এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে রাজ্যের ১০জন কুকি বিধায়ক পৃথক প্রশাসনের দাবি জানিয়েছেন। যার জবাবে ২৩ জন মেইতেই বিধায়ক একটি পাল্টা প্রস্তাবে যৌথ স্বাক্ষর করেছেন। এবং এইখানেই বিজেপি-র উগ্র জাতীয়তাবোধের ধারণা প্রচার ব্যর্থ হচ্ছে বলে অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন। কারণ, ‘কুকিল্যান্ড’-এর দাবি উঠছে সেই দলের বিধায়কদের থেকেই যে দল ‘এক দেশ এক ভোট’-এর দাবি তুলে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া।
না, প্রধানমন্ত্রী যে এই আগুনে হাত জ্বালানোর জন্যে মণিপুরে সশরীরে আসবেন, এমন আশা অতি মূর্খও করবে না। তবে মণিপুরের অশান্তির সংবাদ যাতে ভারতের অন্য প্রান্তে তথা বিশ্বে না ছড়িয়ে পড়ে, তার জন্যে সম্প্রতি ছাঁকনি ব্যবস্থা আঁটসাঁট করা হলো সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে। কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নথিভুক্ত সংবাদমাধ্যম এবং সরকার স্বীকৃত সাংবাদিক পরিচিতি পত্র ছাড়া মণিপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে আর সাংবাদিকতা করা যাবে না।
Comments