রাজ্যকে ভাগ করতে দেব না। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় শুভেন্দুর প্রস্তাবিত অংশ অন্তর্ভূক্ত করতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। শুভেন্দু অধিকারীর কাছে গিয়ে পরিষদীয়মন্ত্রী কথা বলে নতুন করে অখণ্ড বাংলার প্রস্তাব লিখলেন।
সোমবার এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল বিধানসভা।
রাজনৈতিক ভাবে তাঁরা বিরোধী। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর একজন বিরোধী দলনেতা হয়েছেন। অন্যজন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সোমবার এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বিধানসভা। এতদিন শাসক বনাম বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক যুদ্ধের ছবি দেখেছে বাংলা। সোমবার অখণ্ড বাংলার পক্ষে প্রস্তাব আনতে বললেন শুভেন্দু অধিকারী।
'অখণ্ড পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে প্রস্তাব আনুন, আমরা সমর্থন করব।'- শুভেন্দু অধিকারী, বিরোধী দলনেতা
বিরোধী দলনেতার এই প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
'পশ্চিমবঙ্গ এক থাকবে। বাংলাকে আমরা ভাগ করতে দেব না। প্রস্তাবের শুরুতে থাকবে।'-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী
শুভেন্দুর অখণ্ড পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে প্রস্তাব মেনে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,
'এটা স্পর্শকাতর বিষয়। বিরোধী দলনেতা যা বললেন সেই প্রস্তাব গ্রহণ করতে বলব। ছোট ছোট অনেক বিষয়ে ঝগড়া থাকবে। বাংলাকে ভাঙতে দেব না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব'
এরপরই শাসক পক্ষ ও বিরোধী দলনেতার মত নিয়ে সর্ব সম্মতিতে প্রস্তাব পেশ হয়। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার সই করিয়ে পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বিকল্প প্রস্তাব পাঠ করেন। সেই প্রস্তাবে লেখা হয়,'আমরা অখণ্ড পশ্চিমবঙ্গকে যেকোনও মূল্যে রক্ষা করব। আমরা বিভাজন চাই না। এই সদন অবিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ'
অখণ্ড বাংলা ইস্যুতে সৌজন্যের বার্তা দিলেন মমতা। পাশাপাশি আরও এক বিরল মুহূর্তের সাক্ষী থাকল বিধানসভা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে যাবেন, এমন কথাও শোনা গেল। অখণ্ড বাংলা ইস্যুতে বলতে গিয়ে মমতা বলেন, অনন্ত মহারাজের বাড়ি গিয়ে এক কাপ চা খেয়েছি তো কী হয়েছে? আপনি ডাকলেও যাব (শুভেন্দুর উদ্দেশে)। মমতার চা খাওয়ার প্রস্তাবে হেসে প্রত্যুত্তর দেন শুভেন্দু।
চলতি বছরই লোকসভা নির্বাচনের পর গত ১৮জুন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিধানসভায় সেই প্রসঙ্গ তোলেন মমতা।
সব শেষেও ছিল বিধানসভায় চমক। যেন মধুরেন সমাপয়েত। এই প্রথমবার বিধানসভায় রাজ্য সঙ্গীতে গলা মেলালেন বিজেপির বিধায়করাও। এর আগে যে রাজ্য সঙ্গীতের প্রতিবাদে বিধানসভা উত্তাল করেছিলেন বিজেপি বিধায়করা। এদিন সেই দৃশ্যতো উধাও। বরং শাসক-বিরোধী সবপক্ষ এক সুরে মিলে গেলেন।
এ যেন বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে বিধানসভার রাজনৈতিক মতভেদের সমাপ্তি হল বিরলদৃশ্যে। অখণ্ড বাংলার প্রস্তাবের মতো রাজনৈতিক ভাবেও অখণ্ডতার ছবি দেখল বিধানসভা।
Comments