লিখছেন সুমিত দাস , সাংবাদিক
রকেট উড়লো। চাঁদে পৌঁছেও গেল চন্দ্রযান। আনন্দে আত্মহারা ভারত। বাঙালি মননেও উচ্চাস। ওদিকে র্যাগিংয়ে মৃত্যু, নেশা নিয়ে একাংশের নানান অভিযোগে বিষণ্ণ, আক্রান্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এই আবহে খানিক স্বস্তি সাবেক-মননশীল যাদবপুরে। এখানকার বেশ কিছু উজ্জ্বল ছাত্র ইসরোর চন্দ্রযান প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অনুজ নন্দী, অমিতাভ গুপ্ত ও সায়ন চট্টোপাধ্যায়রা সেই কৃতি বাঙালি, যাদের জন্য ক্যাম্পাস গর্বিত। ইসলামপুরের অনুজ নন্দী হস্টেলে থাকতেন। বামপন্হী ছাত্র সংগঠন এআইএসএ করতেন। ক্যাম্পাস-জীবনের নানা রঙে মেতে ছিলেন সবাই। অনুজ চন্দ্রযান - ৩ এর ক্যামেরা ডিজাইন করেছেন। এদিকে একদা তার ফেলে আসা হস্টেলে সিসিটিভি বসানোর দাবিও তীব্র হয়েছে। হস্টেলের সামাজিক ইমেজ বেশ টলোমলো!
যাদবপুরের সিসিটিভি বিতর্কে নির্বাচিত কয়েকটি জায়গায় ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এদিকে অনুজের কাজও ক্যামেরা-কেন্দ্রিক। আর এখানেই যাদবপুরকে মাঝে রেখে মহাকাশযান, ক্যামেরা ও নজরদারির প্রযুক্তিও একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ করছে। জটিল লাগছে? তাহলে গল্পটা খুলেই বলা যাক!
সিসিটিভি এলো কোত্থেকে?
১৯২৬-এর ১৬ মার্চ, প্রথম রকেট আকাশে ছড়লেন মার্কিন বিজ্ঞানী প্রফেসর রবার্ট গোদার্ড। মাত্র সাড়ে ১২ মিটার গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো সেই আধুনিক রকেট। এর ১৬ বছর পর ১৯৪২ নাগাদ ভি-২ রকেট মিশাইল বানায় জার্মানি। আর মহাকাশে প্রথম পাড়ি দেওয়া রকেট স্পুটনিক ৪ অক্টোবর ১৯৫৭ সালে উৎক্ষেপণ করে রাশিয়া। আর রকেটটি ছিল - আর ৭ আইসিবিএম রকেট।
১৯২৬ এর ব্যর্থতার পর, বোমাবাহী রকেট বা মহাকাশ গবেষণার জন্য বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। গতি ও শক্তির প্রযুক্তি দিয়ে আকাশে ছুঁড়ে দেওয়া রকেট দূর থেকে পর্যবেক্ষণের জন্য দরকার ছিল ক্যামেরা। ১৯৪২ সালে জার্মানির বিজ্ঞানী ওয়াল্টার বারুচ এমন ক্যামেরা তৈরি করেন, যাতে দূর থেকেও রকেট দেখা যায়। নাম দেওয়া হল 'ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন'। সিসিটিভি। বারুচ ১৯৬২ সালে মারা যান। ফলে, তিনি কল্পনাও করেননি, - একদিন তাঁর তৈরি ক্যামেরা বিশ্বব্যাপী হয়ে উঠবে নজরদারির ডিভাইস।
হ্যাঁ বিজ্ঞানী বারুচের সেই আবিষ্কার বদলে দিয়েছে অনেককিছু। ট্রাফিক কন্ট্রোল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সারা পৃথিবীই আজকাল সিসিটিভি-নির্ভর।
এ লেখার শেষ প্রান্তে পড়ে রইল যাদবপুর। আপাতত সেখানকার মেইন হস্টেলে সিসিটিভি-বিতর্ক তীব্র হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সরকার বা অথরিটির সিসিটিভি বসানো নিয়ে বিতর্কও আছে আজকাল। ব্যক্তিগত পরিসর ও নজরদারির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও সেই একই বিতর্ক।
বিতর্ক ও বিজ্ঞানের সৃষ্টি নতুন নয়। প্রয়োগ নিয়ে নানান মতামত ও দৃষ্টিকোণ থাকবে। বিজ্ঞান গঠনমূলক না ধ্বংসাত্মক - তা চিরকালই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। আর এই আলোচনার মধ্যেই উঠে এল যাদবপুরের ছাত্র ও বিজ্ঞানী অনুজ নন্দীর নাম। নানান বিবর্তন পার করা অত্যাধুনিক ক্যামেরা পৌছলো চাঁদে। অনুজের কৃতিত্ব সেই নজরদারিতে। আর ভিন্ন দৃষ্টিকোণে সেই নজরদারিই নিয়েই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্ক। সিসিটিভি নামক সেই ডিভাইসটি সভ্যতার সঙ্গে সেই কবে জুড়ে দিয়ে গেছেন বিজ্ঞানী ডরোথি ওয়াল্টার বারুচ (৫ ডিসেম্বর, ১৮৯৯ - ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৬২)
Comments