উত্তর থেকে দক্ষিণ শুরু হয়েছে মুষলাধার বৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড়, ৬ জেলায় জারি হলুদ সতর্কতা

বঙ্গোপসাগরে শুরু হয়েছে নিম্নচাপ ঘনীভূত হচ্ছে। তার প্রভাবেই জেলায় জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে বৃষ্টির দাপট। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে শুক্রবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল।

শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি কয়েকটি এলাকায় আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর।হুগলির কোদালিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বেনাভারুই গ্রাম এবং মগরা-ত্রিবেণী এলাকায় শনিবার আচমকা ঘূর্ণিঝড় হয়।

হুগলির কোদালিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ত্রিবেণীতে আচমকা ঘূর্ণিঝড় হয়। গঙ্গার উপরে পাক খেতে দেখা যায় ধুলোর রাশিকে।

ক্ষতি হয়েছে ত্রিবেণীর শ্মশান ঘাটের চাল উড়ে গিয়েছে ঝড়ের ধাক্কায়। আরও বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেই জানাচ্ছে। চাষের ক্ষেতেও বিস্তর ক্ষতি হয়েছে। চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

তবে শনিবার সকাল থেকে শুধু হুগলি নয় কলকাতেও আকাশের মুখও ভার। কোথাও ঝিরঝিরে বৃষ্টি, কোথাও ঝমঝমিয়ে চলছে বর্ষণ। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকায় জলও জমে গিয়েছে।

উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টি চলছে। আগামী চার দিন উত্তরের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে হয়েছে।দক্ষিণ এবং উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই টানা বৃষ্টি পড়ছে।

সূত্রে খবর দার্জিলিঙের পাহাড় এবং সমতলে শনিবার ভোর রাত থেকেই বৃষ্টি চলছে। কোথাও হালকা ঝিরঝিরে বৃষ্টি, কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে মাঝারি বৃষ্টিতে ভিজছে পাহাড়। আগামী কয়েক দিনে বৃষ্টির দাপট বৃদ্ধি পেতে পারে।

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন কোচবিহার শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। উত্তরবঙ্গে গত কয়েক দিন বৃষ্টি হয়নি। বরং গরমে হাঁসফাঁস করছিলেন মানুষ। মালদা, উত্তর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো জেলাগুলিতে বৃষ্টিতে ফিরেছে স্বস্তি পেয়েছে মানুষেরা।

এই বৃষ্টি ডেকে এনেছে বিপদও। বীরভূমে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে ময়ূরাক্ষী এবং অজয় নদের জল। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ফেরিঘাট ভেঙে পড়েছে, বন্ধ করেছে পরিষেবা।

বাঁকুড়ায় শুক্রবার বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। শনিবার ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক এক ঘটনা। বিষ্ণুপুর থানার বোড়ামারা গ্রামে মাটির দেওয়াল ভেঙে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টিতে নরম হয়ে যাওয়ার কারণেই মাটির দেওয়াল ধসে পড়ছে।

হুগলির উত্তরপাড়ায় ঝড়বৃষ্টির প্রভাবে একটি বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ ভেঙে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মনে।

বৃষ্টিতে জেলায় জেলায় চাষের ক্ষতি হয়েছে। হুগলির পাশাপাশি, পূর্ব মেদিনীপুরে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সব্জি, ফুল এবং ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরপর দাম বাড়বে, সবজি, ফুল ইত্যাদি জিনিসের।

বৃষ্টিতে কাহিল দুই ২৪ পরগনাও। টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর, গড়িয়া, বারুইপুর, জয়নগর, ডায়মন্ড হারবার, বজবজ, মহেশতলার রাস্তা জলমগ্ন। মানুষ জলজমার কারণে বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন না। রাস্তাঘাট তাই অন্যান্য দিনের তুলনায় ফাঁকা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া নিয়ে সতর্ক সুন্দরবন প্রশাসনও। ইতিমধ্যে সেখানে একাধিক নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।

হাওয়া অফিস জানিয়েছে , উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত সুস্পষ্ট নিম্নচাপের আকার নিয়েছে। সেটি ক্রমশ ওড়িশা এবং বাংলার উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে। এর ফলে সাগরের উপরে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় মৎস্যজীবীদের আগামী কয়েক দিন সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

এই বৃষ্টি নিয়েই মানুষ পৌঁছাচ্ছে অফিস, বসছে বাজার হাট। তবে এই বৃষ্টির পরিমাণ এবং ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা দেখেই প্রশাসন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে এবং রাজ্যবাসীদেরকে সতর্ক করেছে বলে খবর নবান্ন সুত্রে।