গত ১১ বছর ধরে চলছে সোনাগাছিতে দুর্গাপুজো। নানান সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে যৌনপল্লির এই পুজোকে। আদালত থেকে করোনা - সব কিছুর কারণে বাধা এলেও আন্তরিক ভাবে দুর্গাপুজো সম্পন্ন করেছেন এখানকার মহিলারা। শুধু তাই নয়, গত কয়েক বছর ধরে এখানে আয়োজিত হচ্ছে থিমের দুর্গা পুজো।
প্রতি বছরেই এই পুজোর আয়োজক 'দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি' নামে যৌনকর্মীদের সংগঠন, একটি নতুন সামাজিক বার্তা দেওয়ার ভাবনা থেকেই দুর্গাপুজো আয়োজন করেন। সেই রীতি মেনেই এবার এখানকার বাসিন্দারা বলতে চান নিজেদের কথা - উত্তর কলকাতার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, শেঠবাগান, রামবাগান গলির মেয়েদের কথা।
এই বছরের পুজোর থিমে তাই যৌনকর্মীদের ঘোষণা — 'আমাদের পুজো, আমরাই মুখ'। আয়োজক 'দুর্বার'-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় সোনাগাছির পুজোর হোর্ডিং দেখা যাবে।
কলকাতার বড় পুজোগুলির আয়োজকেরা বিভিন্ন অভিনেতা অভিনেত্রীদের ক্লাবের ব্র্যান্ড আম্বাসাডোর হিসেবে বিজ্ঞাপিত করে। সেই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বিজ্ঞাপিত করবার দায়িত্বটিও এবার 'দুর্বার' সংগঠনের যৌন কর্মীরা নিজেদের হাতেই রাখতে চাইছেন। তাই নিজেরাই মডেল হিসেবে সেজে ফটোশ্যুটে হাজির হয়েছেন। বিভিন্ন ফ্লেক্স ও ব্যানারে দেখা যাবে তাঁদেরই মুখ।
এই পুজোর হোর্ডিং এবার কলকাতার সব জায়গায় দেখা যাবে। 'আমাদের পুজোয় আমরাই মুখ'।
আইন এবং সমাজ - দুইয়ের বিরুদ্ধে নানান স্তরে লড়াই চালিয়ে দুর্বার ২০১৩ সালে প্রথমবার আয়োজন করে দুর্গাপুজো। সেই পুজো প্রতি বছরেই ব্যক্ত করে এখানকার মহিলাদের আশা- আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্ন। কিন্তু তারপরেই ঘটে নতুন এক বিপর্যয়।
২০২১ সালে কলকাতার চোরবাগান সর্বজনীনের পক্ষ থেকে মাত্র ১০১ টাকার বিনিময়ে দুর্বার-কে দেওয়া হয় দুর্গা প্রতিমা। তাতেই পুজো সম্পন্ন করেন আয়োজকেরা। উপায়ও ছিল না। কারণ, করোনা অতিমারিতে লকডাউন চলাকালীন বহু যৌনকর্মীই এই পাড়া ছেড়ে চলে যান, তাঁদের অনেকেই আর ফেরেননি। যাঁরা ফিরেছিলেন তাঁদের রোজগারও সেই সময়ে খুবই কম।এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে 'দুর্বার'।
'দুর্বার'-এর মুখপাত্র মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় জানালেন, ‘‘এখন শুধু কলকাতাতেই নয়, দুর্বারের উদ্যোগে বিষ্ণুপুর, দুর্গাপুর, আসানসোল, বসিরহাটের যৌনপল্লিতেও দুর্গাপুজো হয়।’’
Commentaires