শনিবার সকালে সন্দেশখালির বিজেপি নেতার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গঙ্গাধর কয়াল নামে ওই বিজেপি নেতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, সন্দেশখালির ঘটনা পুরোটাই সাজানো। মহিলাদের ধর্ষণের ঘটনাও মিথ্যে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী গোটা ঘটনায় টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন বলেও দাবি করেছেন ওই বিজেপি নেতা। লোকসভা ভোটের মাঝে বিষয়টিকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপাউতোর শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপিকে নিশানা করে আসরে নেমেছে তৃণমূল।
সন্দেশখালিতে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল। স্টিং অপারেশনে গঙ্গাধর স্পষ্টতই জানিয়েছেন, সন্দেশখালিতে রেখা পাত্রদের ধর্ষণের অভিযোগ সাজানো। তাঁদের ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর এও দাবি, এজন্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁদের টাকা ও মোবাইল দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। যদিও সেই অভিযোগ মানতে নারাজ বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র।
সন্দেশখালির পাত্র পাড়ার বাসিন্দা রেখা পাত্র। সন্দেশখালির মহিলারা যখন শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলেন তখন একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন রেখা। সন্দেশখালির আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সন্দেশখালির আন্দোলনের সেই মুখকে লোকসভার টিকিট দিয়ে চমকও দিয়েছিল বিজেপি।
সন্দেশখালির ঘটনার আঁচ যখন রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে সারা দেশে গনগন করছে তখন নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণার আগে বাংলায় এসে সন্দেশখালির কয়েকজন প্রতিবাদী মহিলার সঙ্গে দেখাও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার মধ্যে ছিলেন রেখাও। বসিরহাটের সন্দেশখালির আন্দোলন থেকে উঠে আসা সেই রেখাই চব্বিশের লোকসভায় বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু শনিবারের প্রকাশিত ভাইরাল ভিডিওতে রেখা পাত্রদের ধর্ষণের অভিযোগ সাজানো বলে দাবি করায় শুরু করেছে বিতর্ক। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে রেখা জানিয়েছেন, "সবই তৃণমূলের চক্রান্ত।"
ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করাতে মহিলাদের কীভাবে রাজি করানো হয়েছিল তাও ভাইরাল ওই ভিডিওতে শোনা যায়। গঙ্গাধর জানিয়েছেন, রেখাই প্রথম জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাঁকে দেখে বাকি মহিলারা করেছে। যেটা বলেছি ওরা সেটা শুনেছে। ওদের বোঝানো হয়েছে, গ্রেফতার না হলে ওদের টিকতে দেওয়া হবে না। আন্দোলনও সফল হবে না। এই নিয়ে তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন রেখা। তিনি বলেন, "সংগঠনের সভাপতি এমন বলতে পারেন না। হয়তো ভয় দেখিয়ে ওনাকে কেউ কথাগুলি বলিয়েছে।"
আর যার ভিডিও নিয়ে এত শোরগোল সেই গঙ্গাধরও ইতিমধ্যে ভিডিওটি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, চক্রান্ত করে তাঁর মুখ বসিয়ে ভিডিওটি করা হয়। এমনকী তিনি এই ঘটনার জন্য সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সন্দেশখালির ওই স্টিং নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে কড়া ভাষায় এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন তিনি। এরপর নদিয়ার চাকদহের সভা থেকে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, "আমি অনেকদিন ধরেই বলছিলাম, এটা সাজানো পরিকল্পনা। এখন সেটা ফাঁস হয়েছে।" অভিষেকও একটি পোস্টেে লেখেন, ‘‘গোপন ক্যামেরায় তোলা সন্দেশখালির ভিডিও দেখে আমি স্তম্ভিত। বাংলার প্রতিটি মানুষের দেখা উচিত, এই বাংলা-বিরোধী বিজেপি কীভাবে তাদের রাজনৈতিক ফয়দা তোলার জন্য বাংলাকে অসম্মানিত করেছে’’ তবে শাসকদল যাই বলুক, সন্দেশখালির ভিডিও প্রসঙ্গে এখনও মুখ খোলেননি শুভেন্দু।
Comments