মাঝে দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার হবে। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের সদর দফতরে যখন লোকারণ্য, তখন চেন্নাই থেকে নিভৃতে চন্দ্রযান-৩ প্রকল্পের দিকে মনোযোগী নজর রেখেছেন এককালে বায়ুসেনার উইং কমান্ডার। তিনিই এখনও পর্যন্ত মহাকাশে পা রাখা একমাত্র ভারতীয়। রাকেশ শর্মা।
গত জানুয়ারির ১৩ তারিখ ৭৪ বছর বয়স অতিক্রম করেছেন। জন্মসূত্রে পাঞ্জাবের মানুষ। জন্মেছেন পাতিয়ালায়। বড় হয়েছেন হায়দরাবাদে। সেখানকার জর্জ'স গ্রামার স্কুলের ছাত্র রাকেশ পরে ভর্তি হন নিজাম কলেজে। পরে ৬৬ সালে, সেখান থেকে ন্যাশানাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির। ৭০ সালে এয়ার ফোর্সের পাইলট হন রাকেশ।
৮০ দশকের মধ্যভাগ থেকে ৯০ এর দশকের স্কুল পাঠ্যে উজ্জ্বল হয়েছিল রাকেশ শর্মার নাম। ভারতের একমাত্র মহাকাশচারী। এর আগে ৮৪ সালে কৃতিত্ব স্হাপন করে ফেলেন বায়ুসেনার কর্মীটি। সোভিয়েত রাশিয়ার ইন্টার কসমস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে 'সয়ুজ টি-১১'- তে চেপে পাড়ি জমান মহাকাশে। দিনটা ছিল ৩ এপ্রিল, ১৯৮৪।
বিমানবাহিনীর আরেক পাইলট রবীশ মালহোত্রা ছিলেন স্ট্যান্ডবাই, মানে বদলি হিসেবে। অবশ্য তার প্রয়োজন হয়নি।
মাঝে প্রায় চার দশক। আপাতত, ভারতীয় মহাকাশ গবেষকরা মহাকাশে নভশ্চর পাঠানোর উদ্দেশ্য কাজ করছেন। সব ঠিকঠাক চললে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৪ পাইলট মহাকাশচারী হবেন। লক্ষ্য পূরণে নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। আর এই মিশন নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে পুষ্ট করছেন রাকেশ শর্মা স্বয়ং।
রাকেশ মনে করেন, 'উন্নত দেশগুলির সঙ্গে মহাকাশ চর্চায় এক আসনে আসতে গেলে, - নিজস্ব পরিকাঠামো ও বিশুদ্ধ বিজ্ঞান চর্চার প্রয়োজন। তাহলে, ভারত একদিন সারাবিশ্বের মহাকাশ নীতিকে প্রভাবিত করতে পারবে। ২০২৫ সালে নিজস্ব প্রযুক্তিকে মহাকাশচারী পাঠাতে চায় ভারত। জটিল, বিপদসঙ্কুল এই মিশন উচ্চাকাঙ্খারও বটে। রাকেশ শর্মা চান, ক্রু-দের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হোক৷
মহাকাশ গবেষণায় কোনও দেশই প্রযুক্তি শেয়ার করে না। রাকেশ শর্মা মনে করেন, - কম খরচে নিজস্ব প্রযুক্তিতে মহাকাশ কর্মসূচির মাধমে ভারতের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা লক্ষ্য হোক আমাদের। অর্থনীতি, টেলি যোগাযোগ, দুর্যোগ সতর্কতা, টেলি মেডিসিন, দূর শিক্ষার উন্নয়নে ভারত সরকারের আরও চিন্তাভাবনার অবকাশ আছে।
মহাকাশে কাটিয়েছেন ৭ দিন ২০ ঘন্টা ৪০ মিনিট। সোভিয়েত মহাকাশ যানে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছেন রাকেশ শর্মা। কুন্নুরের বাড়িতে ৩৯ বছর আগের স্মৃতি রোমন্হন করতে গিয়ে এখনও বলেন - অবিরাম মহাবিশ্বের সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সৌন্দর্য তাঁর আজীবন মনে থাকবে। কিন্তু, মহাবিশ্ব, মানুষের পরিবেশ, সবই অস্হিতিশীল উন্নয়নের জন্য বিপন্ন হচ্ছে। মহাকাশ থেকে পৃথিবী ও ভারত দেখা মানুষটি পরিবেশের বিপন্নতায় বিষন্ন হন!
Comments