top of page

রাজনীতির উল্লেখ না করেও রামমন্দিরে রাজনীতির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন ‘তপস্বী’ মোদী, বার্তা বিরোধীদেরও



তাঁর হাত ধরেই ৭৭ বছর পর স্বাধীন ভারতে একটা বড় দিক-পরিবর্তনের সূচনা হয়ে গেল। রামমন্দিরের উদ্বোধনের পর সেই চত্বরেই তৈরি মঞ্চে যখন একে একে বলছেন নরেন্দ্র মোদীরা, সবার বক্তৃতাতেই বিজয়গরিমার সুর স্পষ্ট। তবে মোদীর বক্তৃতা সেই বিজয়োৎসবের সুর ছাপিয়ে দিশা নির্দেশ করল ভবিষ্যতের দিকেও। সামনে লোকসভা ভোট। সরাসরি রাজনীতির কথা তিনি বলেননি। আবার বলেওছেন। বিজেপি নেতা হিসাবে, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদী যে ‘বিকশিত ভারত’ বা ‘অমৃতকাল’-এর কথা বলেন, সদ্য উদ্বোধন হওয়া রামমন্দির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েও তা উচ্চারণ করেছেন তিনি। সঙ্গে বার্তা— ‘‘২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারির সূর্য নতুন আভা নিয়ে উঠেছে। এই দিনটি ক্যালেন্ডারে নিছক একটা তারিখ নয়, এক কালচক্রের সূচনা হয়ে থাকবে।’’ অর্থাৎ এই উদ্বোধনকে তাঁদের আন্দোলনের পরিণতি হিসাবেই শুধু দেখাতে চাইলেন না মোদী, দেখাতে চাইলেন একটা সূচনাবিন্দু হিসাবেও। সম্ভবত নির্বাচনী প্রচারের ভিত্তিপ্রস্তরটাও স্থাপিত হয়ে গেল ২২ জানুযারির এই মঞ্চ থেকে।



রামমন্দির আন্দোলনের সময় থেকেই গেরুয়া শিবির একটা কথা বলে এসেছে— অযোধ্যায় রামলালার ভব্য মন্দির তৈরি হলেই দেশে রামরাজ্যের সূচনা হবে। মোদী সেই সুরেই আগামীর প্রত্যাশা শোনালেন, ‘‘একটা লক্ষ্য সত্যি প্রমাণিত হয়ে গেলে প্রমাণিত হয় যে আর এক লক্ষ্যে পৌঁছনো অসম্ভব নয়।’’ মন্দিরে নতুন রামলালার মূর্তিতে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র পর বললেন, ‘‘ভারত এ বার আগে যাবে। এই সময়ের অপেক্ষা ছিল। বিকাশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় যেতেই হবে।’’ সেই সঙ্গে বিরোধীদের কাছেও ‘সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা’র ডাক দিলেন তিনি।



প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র অনুষ্ঠান ছিল মূলত ধর্মীয়। কিন্তু সেখানে ‘নায়ক’ হিসাবেই মোদীকে তুলে ধরা হয়েছে। তিনিই প্রধান ‘যজমান’ হয়ে থেকেছেন। পাশে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত থাকলেও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মূল কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরেই রইলেন। তবে বক্তৃতার ক্ষেত্রে অনেকটাই সময় পেয়েছেন যোগী। মোদীকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রনেতা হিসাবে সম্বোধন করে, তাঁর আমলে অযোধ্যার কী কী উন্নতি হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন অনেকটা সময় জুড়ে। ডবল ইঞ্জিন সরকারের সুবিধা বলার পাশাপাশি গেরুয়াধারী যোগীর সগর্ব ঘোষণা— ‘‘মন্দির ওঁহি বনা হ্যাঁয়, যাহা বানানেকা সঙ্কল্প লে গ্যায়া থা।’’



যোগী থেকে ভাগবত সকলেই মঞ্চে নিজেদের কথা বলার আগে এক বার করে মোদীর প্রশংসা করেছেন। শুরুতেই সুর বেঁধে দিয়েছিলেন রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সহ-সভাপতি গোবিন্দদেব গিরি। তিনি মোদীর কথা বলতে গিয়ে কেঁদেও ফেললেন। বলেন, ‘‘তিন দিন ব্রতপালনের নির্দেশ দিলেও মোদী ১১ দিন উপবাসে থেকেছেন। তিন দিন নয়, ১১ দিন ভূমিতে শয়ন করেছেন। তিনি তপস্বী রাষ্ট্রপ্রধান।’’ গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতিক মুখ মোদীকে নিয়ে একই আবেগ ছিল ভাগবতের গলাতেও। তিনিও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নির্দেশের চেয়েও বেশি কঠোর ব্রত রেখেছেন। আমি আগে থেকেই জানি উনি তপস্বী।’’ এর পরে মহাত্মা গান্ধী থেকে ভগিনী নিবেদিতার কথা উল্লেখ করে ভাগবত দেশবাসীকে তপস্বী হয়ে ওঠার কথা বলেন। একই সঙ্গে বলেন, ‘‘অযোধ্যায় সম্পূর্ণ মন্দির তৈরি হয়ে যাওয়ার আগে ভারতকে বিশ্বগুরু বানাতে হবে।’’ প্রসঙ্গত, ভাগবতের বলা এই ‘বিশ্বগুরু’ শব্দকেও সাম্প্রতিক কালে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করেছে গেরুয়া শিবির।


Comments


bottom of page