লেটেস্ট আপডেট :
অবশেষে এফ আই আর দায়ের করা হয় ওই প্রধান শিক্ষিকা ত্রিপ্তা ত্যাগীর বিরুদ্ধে। সংবাদসূত্র এএনআই সূত্রে খবর ওই প্রধান শিক্ষিকা নিজের সাফাযইয়ে বলেছেন এই কাণ্ড ঘটানোর জন্য ওনাকে চাপ দেওয়া হয়। উনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বলেও দাবি করেন। ওনার বক্তব্য তাই জন্যই ছাত্রদের দিয়ে মারধর করান তিনি ।
এদিকে নির্যাতিত শিশুর বক্তব্য, প্রায় এক ঘন্টারও বেশী সময় ধরে তার ওপর মারধর চালানো হয় শিক্ষিকার নির্দেশে।
ক্লাসরুমে শিশুদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ। প্রধান শিক্ষিকার নির্দেশে একেএকে মুসলমান শিশু পড়ুয়াকে চড় মারছে হিন্দু ছাত্ররা। আর ক্যামেরায় রেকর্ড করতে করতে হাসছেন এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকণ্ঠ।
সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুজফ্ফরপুরের এই ভিডিও আসতেই শুরু হয় নিন্দার ঝড়। এর পরেই ময়দানে নামে ন্যাশানাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস(এনসিপিআর)। মুজফফরপুরের পুলিশ সুপারকে অবিলম্বে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এনসিপিআর। সঙ্গে অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করতে বলেছে কমিশন।
শিশু সুরক্ষার আইন ২০১৯-এর ১৭ নম্বর ধারা ও জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট ২০১৫-এর ৭৫ নম্বর ধারা লঙ্ঘন হয়েছে বলে এনসিপিআর জানিয়েছে। জুভেনাইল জাস্টিস আইনের ৭৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, - শিশুকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করলে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা অবধি হতে পারে।
এনসিপিআর আরও বলেছে, যেহেতু শিশুটি হয়রানির শিকার, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যন্য শিশুদেরও সুরক্ষার প্রয়োজন। একই সঙ্গে ক্লাসের সমস্ত শিশুকে চাইল্ত ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে এনে কাউন্সেলিংয়ের নিদান দিয়েছে এনসিপিআর।
উত্তরপ্রদেশের এই ঘটনায়, মুজফফরপুরের জেলা শাসকের কাছে স্কুলটির বৈধতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে এনসিপিআর। স্কুলের শিশু ও শিক্ষকের সংখ্যা, শিক্ষকরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিনা, এনসিপিআর তা জেলা শাসকের কাছে জানতে চেয়েছে।
মূল ঘটনা :
উত্তর প্রদেশের মুজফ্ফরনগরে এক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার নিদানে শোরগোল দেশে। প্রধান শিক্ষিকা ত্রিপ্তা ত্যাগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি তার ক্লাসে নিদান দিয়েছেন হোমওয়ার্ক না করার জন্য ক্লাসের 'মহামেডান' বা সংখ্যালঘু ছাত্রকে মারধর করবে তারই ক্লাসের সহপাঠীরা ! এই ঘটনার একটি ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে । ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে প্রধান শিক্ষিকা একটি ছাত্রকে আলাদা দাঁড় করিয়ে রেখে বাকি ছাত্রদের তাকে মারার নিদান দিচ্ছেন । একে একে ছাত্ররা উঠে এসে ওই ছাত্রটিকে সপাটে চড় মারছেন । কেউ আসতে মারলে প্রধান শিক্ষিকা আবার তাকে উস্কে দিচ্ছেন আরও জোরে আঘাত করার জন্য ।
৮ বছরের ওই ছাত্রটি মুসলমান সম্প্রদায়ের । তাকে এভাবে দাঁড় করিয়ে বাকি সহপাঠিদের দিয়ে মারধরের নিদানের কারণ হোম ওয়ার্ক না করা। ভিডিওতে প্রধান শিক্ষিকা বলছেন যে ক্লাসের সমস্ত মুসলমান ছাত্রকে বাড়ি যাওয়ার আগে এভাবেই মারধর করা উচিত কারণ তারা হোমওয়ার্ক করে না ।
পুলিশের তরফ থেকে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হলেও ওই ছাত্রের বাবা কোনও রকম লিখিত অভিযোগ জানাতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য , ছেলে প্রথমে ভয় পেয়েছিল কিন্তু এখন ঠিক আছে । যদিও ওই এলাকার পুলিশ, সার্কেল অফিসার ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন । তবে লিখিত অভিযোগ ছাড়া তা আদৌ কতটা এগোবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
প্রধান শিক্ষিকা ত্রিপ্তা ত্যাগীকে ফোন করা হলে তিনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি । জানা যাচ্ছে তিনি নিজের বাসস্থান থেকেই স্কুলটি চালান । এই স্কুলে ওই এলাকার অনেক মুসলমান ছাত্ররাই পড়াশোনা করে। ঘটনার পর ওই ছাত্রকে তার স্কুল ফি ফেরত দিয়ে স্কুলে না আসতে বলা হয়েছে । জানা যাচ্ছে ঘটনার পর স্কুল থেকে ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়েছেন ওই ছাত্রের বাবা নিজেই ।
২০১৩ সালে এই মুজ্জফরনগর দাঙ্গা দেখেছিল । মারা গিয়েছিলেন ৬১ জন । তারপর ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট লক্ষ্য করে বিজেপি জানিয়ে দেয় এই মুজ্জফরনগরেই তারা মুসলিম অধিবেশন করবে। যোগী রাজ্যে বার বারই শোনা যায় জাতি বিদ্বেষ ও হিংসার অভিযোগ। মুজ্জফরনগরের এই ঘটনা নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় বাংলাতেও। মন্ত্রী চন্দ্রিমা বিশ্বাস কড়া ভাষায় গোটা ঘটনার নিন্দা করেছেন।
কখনও বুলডোজার তো কখনও কাফিল খান। কখনও ঠোক দো রাজনীতি তো কথনও আবার দলিতদের ওপর হিংসা ও ধর্ষণের অভিযোগ । তার সঙ্গে জুড়ল মুজ্জফরনগরের স্কুলে ঘটে যাওয়া আজকের এই ঘটনা । রাজনৈতীক মহলে প্রশ্ন, যোগী রাজ্যে কেন বাড়ছে জাতি- ধর্ম বিদ্বেষ ? তাহলে কী সব কা সাথ সব কা বিকাশের নারা পুরোটাই ভাঁওতা?
Comments