top of page

মণিপুরের দাঙ্গা পেরিয়ে ক্লাসে ব্লেসি। কেঁদে উঠল ক্লাসরুম। কুকি মেয়ের গল্পে কাঁদল কলকাতা

অতিথি লেখক - সুমিত দাস, সাংবাদিক



রক্তমাখা পথ পেরিয়ে এসছে মেয়েটা। স্মৃতিতে পরিজনের লাশ। যখন তখন ধর্ষিতা হয়ে যেতে পারতো। মণিপুরের উঁচুনিচু পথ পেরিয়ে গৌহাটি , সেখান থেকে কলকাতা।

আশুতোষ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ব্লেসি হোই চ্যাং। গত শুক্রবার পলিটিক্যাল সায়েন্সের অনার্স ক্লাসে পড়াচ্ছিলেন অধ্যাপিকা সঞ্চিতা সান্যাল। হঠাৎই চোখ পড়ে শেষ বেঞ্চে। জুবুথুবু বছর আঠেরোর মেয়েটা বিষণ্ণ ছিল। প্রশ্ন করলে উত্তর দিচ্ছিলো এক কথায়, কোনও রকমে। শিক্ষিকা সঞ্চিতা সান্যাল মণিপুরের মেয়ে জেনে নিজের পাশে ডাকলেন। বলতে বললেন ব্লেসির গল্প। ব্লেসির 'ইন্ট্রো'(ইন্ট্রোডাকশন)। ধীরে ধীরে আগল খুললো কুকি মেয়ে। মেঠোপথ, আত্মীয়-পরিজনের লাশ, মৃত্যুভয়, নগ্ন করে হাঁটানোর ভয়, ধর্ষণের ভয় - নিজের পেরিয়ে আসা পথ আর অভিজ্ঞতা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন ব্লেসি হোই চিং। ততক্ষণে ক্লাসের সহপাঠীদের কারো কারো চোখে জল। অঝোরে কাঁদছেন কেউকেউ। কাঁদছেন অধ্যাপক সান্যাল।



শুক্রবারের পর সোমবার, অধ্যাপক সান্যাল জানালেন, - সামনের বেঞ্চে এসে বসেছে ব্লেসি। আগের চেয়ে অনেক বেশি সড়গড় বন্ধুদের সঙ্গে। আপাতত টালিগঞ্জে থাকে ব্লেশি। জাতিদাঙ্গা ও রক্তের স্মৃতি হয়তো মুছবে না। কিন্তু, এই কলকাতায় হাঁটতে হাঁটতে নিশ্চিত জীবনের আরো বড় মানে খুঁজে পাবে ব্লেসি। বলছিলেন অধ্যাপক সান্যাল।


গত ১০-১২ দিনে কলকাতার শিক্ষাঙ্গন খবরের শিরোনামে। সদ্য কলেজে আসা নদীয়ার স্বপ্নদীপের মৃত্যু এখন বাস-ট্রাম-অফিস- ছোটবড় আড্ডার আলোচ্য বিষয়। মৃত্যু না হত্যা, যাদবপুরের এই ছাত্রের মৃত্যুতে বাঙালি সমাজে বিষণ্নতা ও ক্রোধ - দুই-ই বেড়েছে। ১৮০ টির বেশি লাশ, মেইতেই-কুকি জাতিদাঙ্গায় বিদ্ধস্ত মণিপুর থেকে কলকাতায় এসেছেন অনেকেই। ব্লেসির আসতে একটু দেরিই হয়েছে। ক্লাস শুরুর দুসপ্তাহ পর এল সে।

২০০২-এর গুজরাট দাঙ্গার তীব্রতা ছিল আরও মারাত্মক। কলকাতাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন সে দাঙ্গার মুখ কুতুবউদ্দিন আনসারি। ব্লেশির আসা সে অর্থে আশ্রয় নয়। আঠেরো পেরিয়ে নিজেকে খোঁজা আর স্বপ্নের পথে হাঁটা। পেরে যাবে ব্লেসি। বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে উঠলো অধ্যাপক সঞ্চিতার।

ব্লেসির গল্পে কেঁদে ওঠা ক্লাসরুমে ব্লেসিও হেসে উঠবেন সহসা! বলতে বলতে জনপ্রিয় অধ্যাপক বললেন,- কান্নার পরিসর হারিয়ে যাচ্ছে। শোক হারিয়ে যাচ্ছে। যাদবপুরের গেটে আছড়ে পড়া রাজনৈতিক মিছিলে দুঃখ হারিয়ে গেল! শোক ছাড়া বাকিরা বাকিদের জড়িয়ে ধরবে কী করে?

Komentáře


bottom of page