গাছবাউলের বানানো জঙ্গলে ফিরেছে শিয়াল-খরগোশ, ৮ বছরে ৮০০০ গাছের নতুন অরণ্য
- WTN বাংলা নিউজডেস্ক
- Sep 1, 2023
- 2 min read
Updated: Sep 3, 2023
লিখছেন সুমিত দাশ
সন্ধ্যার আগে রান্নাবান্না করে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে আসতে হয়। শিয়াল আসবে খাবে। তারপর ঘুরে বেড়াবে অজয়নদের চড়ে। সকালে-দুপুরে জঙ্গলে হাঁটতে বের হলে,- দেখা মিলবে খরগোশের। ভোর আসন্ন হলে পাখির ডাক শুরু হয়, সন্ধ্যা পার করে সে ডাক থামে কই!

গল্পটা জয়দেব-কেন্দুলির। শ্যামসখা, ওরফে শ্যাম বিশ্বাস, বেহালার মানুষ। নিজেকে বলেন রাজনৈতিক বৈষ্ণব। সামান্য সাড়ে তিন কাঠা জমি কিনে বানিয়েছিলেন ছোট্ট আখড়া। পাশে বিস্তীর্ণ বন দফতরের জমি আর উদাস অজয়নদ।
২০১৪ সালের বর্ষায় গাছ লাগাতে শুরু করলেন শ্যামবাবু। প্রাত্যহিক নগরজীবনে রোজ হারিয়ে যাচ্ছে গাছ। ফলত, স্মৃতিতে থাকা সবুজ চারপাশটা আবার বানানোর তাগিদেই জয়দেবে পৌঁছনো। বেহালার বাড়ি থেকে জয়দেবে রওনা দিলে তাঁর গাড়িতে থাকে নানান গাছ। ডানকুনি, বর্ধমান, পানাগড় হয়ে জয়দেবের পথে রাস্তাতেও দীর্ঘদিন ধরে গাছ লাগাচ্ছেন। আজকাল জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে, ফলে তাঁর কিছু গাছ কাটা পড়েছে। সে গল্প বলতে বলতে শ্যামসখার বিষণ্ণতা বাড়ে।

জয়দেব-কেন্দুলি সহ বীরভূমের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চলে বালি তোলার কাজ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদীর পার। সেই সঙ্গে মাটিতে বালির পরিমানও বেশি। সহজে বড় গাছ লাগিয়ে বড় করা কঠিন। ফলে যত গাছ জীবিত, তার দ্বিগুণ গাছ লাগানো হয়েছিল। অনেকটা ধৈর্য্য আর নিষ্ঠায় বদলে গেছে আশপাশের প্রায় তিন একর এলাকা। শয়ামবাবু জানিয়েছেন, আশেপাশে বন দফতরের প্রায় একশো একর জমি আছে। আছে নদের মানা, মানে স্বাভাবিক বাঁধ। তাঁরা ক্রমাগত গাছ লাগিয়ে যেতে চান।
পাখি ফিরে আসুক! এমন একটা ভাবনা নিয়ে নোনা আতা, জাম, আম, কাঁঠাল, লিচু-র মত ফলের গাছ লাগিয়ে শুরু। গত ৮ বছরে গাছেদের তালিকা বেড়েছে। মনে হয়েছে কত উঠেন থেকে কত গাছ হারিয়ে গেল! ফেরানো যাক! শুরু হল নানারকম গাছ লাগানোর কাজ। বাংলার নানা জেলার গাছ বেড়ে উঠেছে শ্যামসখার অরণ্যে। গাব, রিঠা, মহুয়ার পাশাপাশি শ'চারেক আমলকি আছে এই জঙ্গলে।
মার্চের শেষে শহুরে মধ্যবিত্ত যখন গাছ কেটে বানানো ফ্ল্যাটে হাপিত্যেশ শুরু করে, গরম বাড়তে থাকে, তখন শ্যামসখা আশ্রমের সংগঠকরা 'বর্ষামঙ্গল' উৎসবের আয়োজন শুরু করে। আষাঢ় আসতেই বর্ষামঙ্গল। গাছেদের গান শোনানো আর নতুন গাছ পোতার উৎসব বর্ষামঙ্গল। স্হানীয় বাউলরা যোগ দেন আয়োজনে। লক্ষ্মণ দাস বাউল, অনাথবন্ধু ঘোষ, সন্তোষ কর্মকাররা গান বাঁধেন, গান ধরেন। নিশ্চিত সে গানে গাছের আরাম হয়!
গাছেদের রাজধানী চাই। ওদের পৃথিবী থেকে উৎখাত করছি আমরা। কেউকেউ উল্টোপথে হাঁটছেন। শ্যামসখাও। সব পাখি তিনি চেনেন না, জঙ্গলে লুকিয়ে আছে নানান ঔষুধি। শ্যামসখা চান, নানান মানুষ আসুন তাঁর জঙ্গলে। যাঁরা প্রাণ ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন, তাঁরাও আসুন। ছড়িয়ে যাক জঙ্গল বানানোর ষড়যন্ত্র।
Comments