অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আমন্ত্রিত হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রায় সব দলই সোমবার উৎসবমুখর অযোধ্যাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। আমন্ত্রণ পেলেও সেখানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেসও। সোমবারই হাজরা থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত তৃণমূলের ‘সংহতি যাত্রা’য় হাঁটতে চলেছেন দলের সর্বময় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত মঙ্গলবার রামমন্দির উদ্বোধনকে ‘ভোটের আগে গিমিক’ বলে কটাক্ষ করেন মমতা। ওই দিনই পাল্টা কর্মসূচির ডাক দেন তিনি। নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘ওই দিন হাজরা থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত সংহতি মিছিল হবে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে সর্বধর্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই কর্মসূচি করব।’’ হাজরা মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিল যাবে পার্ক সার্কাস ময়দান পর্যন্ত। মমতা জানিয়ে দেন, হাজরা মোড় থেকে মিছিল শুরুর আগে কালীঘাট মন্দিরে যাবেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘মা কালীকে ছুঁয়ে, মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার, গির্জা ছুঁয়ে, সর্ব ধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই মিছিল করব।’’ দলের পাশাপাশি বৃহত্তর নাগরিক সমাজকেও শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তৃণমূলনেত্রী। ‘সংহতির বার্তা’ দিতে দলকে ব্লক স্তরেও সংহতি মিছিল করার নির্দেশ দেন তিনি।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ এখন বিজেপিশাসিত অসমের উপর দিয়ে যাচ্ছে। সোমবার সে রাজ্যের নওগাঁওতে বটদ্রব সত্র মন্দিরে ঢুকতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাধা দেন বলে অভিযোগ করেছেন রাহুল। তার পরেই অবস্থানে বসে পড়েন কংগ্রেস নেতা। যদিও মন্দির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁরা কেবল স্থানীয় সাংসদ এবং স্থানীয় বিধায়ককে মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন। রাহুলকে মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “আমরা জানিয়েছিলাম যে, ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় মন্দিরে যাব। কিন্তু গত কাল হঠাৎ বলা হল, দুপুর ৩টে পর্যন্ত আমরা সেখানে যেতে পারব না।” অসমের বিজেপি সরকারের চাপের মুখেই মন্দির কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত বদলেছেন বলে দাবি করেছে কংগ্রেস।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র আর এক শরিক আপ রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ উপলক্ষে দিল্লিতে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। রাজধানীর একাধিক জায়গায় এ দিন শোভাযাত্রা করবে আপ। পাঠ করা হবে রামায়ণের সুন্দরকাণ্ড। এই অনুষ্ঠানগুলিতে অংশ নেবেন আপ বিধায়ক, মন্ত্রী এবং পুরসদস্যেরা। এর আগে কেজরীওয়াল জানিয়েছিলেন, নিরাপত্তার কারণে কেবল তাঁকে অযোধ্যায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরে তিনি একা নন, স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মাকে নিয়ে রামমন্দিরে যেতে চান বলে জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকে আগেই জানিয়েছিল যে, তারা ‘মসজিদ ভেঙে’ মন্দির তৈরি করাকে সমর্থন করে না। শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন অভিযোগ করেন যে, তামিলনাড়ুতে রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করতে ‘বাধা’ দিচ্ছে এমকে স্ট্যালিনের সরকার। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ডিএমকে জানায়, সোমবারই রাজ্যের সালেমে হওয়া তাদের যুব সম্মেলন থেকে নজর ঘোরাতেই অবান্তর অভিযোগ করছে বিজেপি।
এনসিপি প্রধান তথা বর্ষীয়ান নেতা শরদ পওয়ার রামমন্দির উদ্বোধনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি জানান, ভিড় কমলে তিনি পরে কোনও সময় মন্দির দর্শনে যাবেন। আর এক প্রবীণ রাজনীতিক তথা আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব জানান, সোমবার তিনি অযোধ্যায় যাবেন না। তবে না যাওয়ার কোনও কারণ ব্যাখ্যা করেননি তিনি। প্রসঙ্গত, এই লালুপ্রসাদই বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর ‘রথযাত্রা’ বিহারের সমস্তিপুরে আটকে দিয়েছিলেন।
এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব জানিয়েছেন, রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র পর তিনি পরে পরিবারের সঙ্গে রামমন্দিরে যাবেন। শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা উদ্ধব ঠাকরেও অযোধ্যায় যাচ্ছেন না। পরিবর্তে তিনি, তাঁর দলের বেশ কিছু নেতা নাসিকের কালারাম মন্দিরে যাবেন এবং গোদাবরীর তীরে ‘মহা আরতি’তে অংশগ্রহণ নেবেন। তাঁকে যে ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তা নিয়েও আপত্তি করেন বালাসাহেব ঠাকরের পুত্র। এক সময় মন্দির আন্দোলনে সাবেক অভিভক্ত শিবসেনা সক্রিয় ভাবে অংশ নিলেও তাঁকে স্পিডপোস্টে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দায়সারা ভাবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
সিপিএম আগেই জানিয়েছিল, তারা অযোধ্যায় যাচ্ছে না। তাদের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, তারা মানুষের ধর্মীয় আবেগকে শ্রদ্ধা জানায়। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলার অভিযোগ করে তারা।
Comments