top of page

‘ভোটের আগে রামমন্দির বিজেপির গিমিক, জয়নগরে সভা থেকে কটাক্ষ মমতার


বিরোধী মহলে কানাঘুষো ছিলই। কিন্তু সত্যিটা এতদিন খোলাখুলি কেউ বেআব্রু করেনি। মঙ্গলবার সেটাই করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধনকে সরাসরি বিজেপির ভোটের গিমিক বলে তোপ দাগলেন তিনি। সাফ বুঝিয়ে দিলেন, হিন্দুত্ব এজেন্ডা চরিতার্থ করতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ‘মেগা শোয়ের’ আয়োজন করেছেন। এই ভিতের উপর দাঁড়িয়েই বিজেপি চব্বিশের নির্বাচন জয়ের স্বপ্ন দেখছে। মরিয়া হয়ে উঠেছে মোদির তৃতীয় ইনিংসকে নিশ্চিত করতে।


রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই প্রচার বাড়ছে গেরুয়া শিবিরে। লক্ষ্য একটাই, ভোটের আগে অযোধ্যাই যেন হয়ে ওঠে রাজনীতির তীর্থক্ষেত্র। আর অবশ্যই তার প্রধান আকর্ষণ নরেন্দ্র মোদি। ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির প্রতিশ্রুতি, জি-২০ সম্মেলনে মোদির নিজেকে বিশ্বগুরু হিসেবে তুলে ধরা, এমনকী চন্দ্রযানের সাফল্য পর্যন্ত পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে। এজেন্ডা এখন একটাই—হিন্দুত্ব। তৃণমূলের অভিযোগ, হিন্দুত্ব ছাড়া আসন্ন ভোটে বিজেপির বাঁচার উপায় নেই। তাই রামমন্দির উদ্বোধনকে হিট করাতেই হবে। এর উপর ভিত্তি করে গো-বলয় তো বটেই, সমগ্র উত্তর ভারতে স্রেফ বিভাজনের রাজনীতিকে হাওয়া দিতে চাইছে গেরুয়া বাহিনী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ছকই ফাঁস করেছেন এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের বহড়ুতে। গঙ্গাসাগর সফর সেরে ফেরার পথে এখানে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সেই মঞ্চ থেকেই শুরু করেন বিজেপিকে আক্রমণ। আর তাঁর অব্যর্থ নিশানায় ছিল ধর্মকে ঢাল বানিয়ে গেরুয়া রাজনীতির ভোটব্যবসা। মমতার কথায়, ‘গতকাল আমাকে রামমন্দির নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। এছাড়া দেশে যেন আর কোনও কাজই নেই! আমি সেই উৎসবে বিশ্বাস করি, যেখানে প্রত্যেকে অংশ নিতে পারে। ঐক্যের কথা বলে। এটা আসলে লোকসভা ভোটের আগে গিমিক শো।’ 


মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা, লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরির মরিয়া চেষ্টা চালাবে গেরুয়া শিবিরের একাংশ। কিন্তু তারপরও মমতার প্রত্যয়ী বার্তা, ‘বিভাজনের ট্রাম্প কার্ড খেলেও বাংলায় ওরা সফল হতে পারবে না। ঈশ্বর-আল্লার নামে শপথ করে বলছি, প্রাণ থাকতে হিন্দু-মুসলিম ভাগাভাগি করতে দেব না।’ বাংলা হিন্দুদের দক্ষিণেশ্বর-বেলুড় মঠ, আর মুসলিমদের মক্কা-মদিনা। এই ভাষাতেই রাজ্যের সংস্কৃতিতে ব্যাখ্যা করলেন অগ্নিকন্যা। ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাঁর আক্রমণ, ‘ভোট এলেই ধর্মে ধর্মে বিভেদ সৃষ্টিতে পারদর্শী ওদের বহিরাগত নেতাদের দেখা যায়। আর নির্বাচন মিটে গেলে বাংলার প্রাপ্য আটকে রেখে দেয়। এটাই ওদের চরিত্র।’ তবে বাংলা যে এই ‘অশুভ শক্তির’ বিরুদ্ধে আত্মসমর্পণ করবে না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন মমতা। এদিন জয়নগর থেকে ফিরে কলকাতার উট্রাম ঘাটে গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে গিয়েও এই একই সুরে তোপ দাগেন তিনি। মমতার কটাক্ষ, ‘সাধু-সন্ন্যাসীরা গেরুয়া রঙের পোশাক পড়েন। কিন্তু এই রঙের অপব্যবহার কখনওই হওয়া উচিত নয়। লাল, সাদা, কালো... পোশাক যে রঙেরই হোক না কেন, আমরা এক পরিবারের সদস্য। সেখানে বিভেদের কোনও জায়গা নেই।’ 


জাতীয় মঞ্চে বিভেদের বিরুদ্ধে এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নেত্রী। সেখানে তাঁর অস্ত্র মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’। আসন ভাগাভাগিই এখন সেখানে মূল্য আলোচ্য। আর প্রশ্ন সিপিএমের সঙ্গে রাজ্যে তৃণমূলের জোট নিয়ে। কংগ্রেস নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও সিপিএমকে কিন্তু এদিন ছেড়ে কথা বলেননি মমতা। এদিন তাদের ফের সন্ত্রাসবাদীদের দল বলে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। টেনে আনেন ৩৪ বছরের সিপিএম রাজত্বে অত্যাচারের প্রসঙ্গ। বলেন, ‘মনে নেই মানুষের মুণ্ড নিয়ে খেলেছে ওরা! ওদের সঙ্গে কোনওভাবেই আপস করব না।’

Comentários


bottom of page