top of page

ললিত মোদী নিরপরাধী কি না, তা নির্ধারণ করছেন হরিশ সালভে


করফাঁকি আর ৭৫৩ কোটি টাকা তছরুপের দায়ে দোষী আইপিএল-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ললিত মোদী ২০১০ সালে দেশ ছেড়ে বিদেশেই বসবাস করছেন। এই মোদীর মনে ভয় বা অনুতাপ যে বিন্দুমাত্র আছে, তেমনটা গত ১৩ বছরে একবারও মনে হয়নি। কারণটা এবার পরিষ্কার হলো। হরিশ সালভের মতো দুঁদে আইনজীবী এই মোদীর পাশে আছেন, যেমনটা তিনি আছেন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর পাশেও।


প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীনে গঠিত কমিটির অন্যতম সদস্য হরিশ সালভে সম্প্রতি তাঁর তৃতীয় বিবাহ ধুমধাম করেই সেরেছেন। মধুচন্দ্রিমা যাপনের পরেই দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জন্যে দেশের সংবিধান ও আইন মেনে কোবিন্দ রিপোর্টের যুক্তি খাড়া করবার দায়িত্ব মুলত ওনারই উপর বর্তেছে। তবে তার অনেক আগেই একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়ে বসলেন তিনি।




লন্ডনে ওনার সাম্প্রতিক বিয়েতে আমন্ত্রিতদের তালিকায় বিভিন্ন হোমরাচোমরাদের মধ্যে আলোকিত করে উপস্থিত ছিলেন ললিত মোদী। দেশ-ছাড়া এই অন্যতম করফাঁকি দেওয়া ব্যক্তিদের অন্যতম এই মোদী কেন সালভের বিয়ের সাক্ষী হলেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলেই প্রশ্ন উঠেছে। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এই প্রশ্ন করা হরিশ সালভেকে করা হলে উনি পাল্টা প্রশ্ন তুললেন, ললিত মোদী যে অপরাধী তা আপনাদের কে বলল?


একথা ঠিক, ভারতের আইন অভিযুক্তদের অপরাধী সাব্যস্ত করেনা। প্রমাণ-সহ আদালতে বিচারপতির সমক্ষেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আবার এই দেশ এমন, যেখানে প্রয়াত ভারভারা রাও এবং অন্যান্য প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র সন্দেহের নিরিখেই হাজতবন্দি করেছিলেন। দেশের হিতে কথা বলবার পুরষ্কার হিসেবে তাঁদের ভাগ্যে দেশের আইনের পক্ষ থেকে তকমা দেওয়া হয়েছিল এবং হয়েছে যে এরা ‘রাষ্ট্রবিরোধী’।




কে রাস্ত্রবিরোধী আর কে নয়, তা কে বা কারা নির্ধারণ করেন? সাধারণত আদালতেই এর ফয়সলা হয়ে থাকবার কথা। কিন্তু সম্প্রতি প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে এই সিদ্ধান্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা নিচ্ছেন। ভারভারা রাও বা স্ট্যান স্বামীর পক্ষে যুক্তি শোনার অবকাশ না থাকলেও দেশ দাগিয়ে দিয়েছে যে রাষ্ট্রের জন্যে এনারা অত্যন্ত বিপজ্জনক। আবার অন্যদিকে, রাষ্ট্রের প্রমুখ প্রতিষ্ঠানগুলি যখন সর্বসমক্ষে ঘোষণা করছেন যে ললিত মোদী বা বিজয় মালিয়া ব্যাঙ্ক থে


কে নেওয়া কোটি কোটি টাকার ঋণ নিয়ে ফেরত না দিয়ে অথবা বকেয়া কর ফাঁকি দিয়ে দেশ ছেড়ে ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, তখন রাষ্ট্রই নীরব।


আমরা জানি সুপ্রিম কোর্টের উকিল হরিশ সালভে ভারতের সংবিধান এবং আইন বিষয়ে এক বিশেষজ্ঞ। ব্যক্তিগত পরিচিতির সুবাদে উনি নিশ্চয়ই ললিত মোদীর মতো ‘দাগি, দেশছাড়া এক জালিয়াৎ’-কে তাঁর বিয়েতে আমন্ত্রিত তালিকায় রাখতেই পারেন। কিন্তু সেই পরিচিতির সুযোগে তিনি যদি এই শঠ মানুষটিকে ‘অপরাধী’ নয় বলে সমক্ষে ঘোষণা করেন তখন দেশের আইনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।


প্রায়ই শোনা যায় বিশ্ব-মানচিত্রে ‘ইণ্ডিয়া’ নামে যে ভৌগলিক সীমা নির্ধারণ করা আছে, সেখানকার অধিবাসীরা ক্ষমতাসীন সরকার এবং তা


র আইনব্যবস্থার চোখে অত্যন্ত ‘সজ্জন’ ব্যক্তি। এনারা যত বড়ই অপরাধ করুক না কেন, ক্ষমতাসীনদের বদান্যতা থেকে তারা কখনোই বঞ্চিত হন না। অন্যদিকে, সনাতন ‘ভারত’ বলে যে অঞ্চল বলে যু


গ যুগ ধরে শুনে এসেছি, সেখানকার অধিবাসীরা ক্ষমতাসীন সরকার এবং আইনব্যবস্থায় তারা বরাবরই ‘হেয়’। এমনকি ‘বেনিফিট অফ ডাউট’-এর পরিসরটুকুও তাদের ভাগ্যে জোটে না। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ‘রেউড়ি’ দেওয়া হলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়, বিশেষত নির্বাচন আসন্ন হলে যে, তারা যেন নিজেদের ‘ধন্য’ মনে করে।


সুতরাং এই দেশের সংবিধান এবং আইন ব্যবহারকারী হরিশ সালভে যে ললিত মোদীর জন্যে দরাজ গলায়, প্রমাণ না হওয়া অবধি নিরপরাধী’ যুক্তি


পেশ করে পরস্পরকে সাবাসি দেবেন এতে আমরা আশ্চর্য হচ্ছি না। সুসাহিত্যিক নারায়ন সান্যালের ভাষায়, ‘ইত্তাই তো হোতা হ্যাঁয়!’ দেশেতেও কিছু মানুষ সুস্মিতা সেনকে আরেকবার প্রসঙ্গে আনবেন, যিনি ললিত মোদীকে বিয়ে করছি করছি বলে করেননি। ‘আহা, এমন ক্ষমতাবান মানুষ পাশে থাকলে সুস্মিতা নিশ্চিত আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন’ – এমন মন্তব্য ভেসে আসছে চারপাশ দিয়ে।


কারণ ‘ভারত’ নামের দেশে যারা বসবাস করেন এই ‘এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই’ জাতীয় অবস্থায় হয় মূক থেকে আর্থিক বা সামাজিক পীড়ায় ভুগবেন, নয়তো নিজেদের মনে এই দেশের দুরাশা নিয়ে আলোচনা করে রাষ্ট্রের কোপে পড়বেন। আপাতদৃষ্টিতে, এর থেকে ‘ভারত’-এর সাধারণ অধিবাসীদের মুক্তি নেই।


Commenti


bottom of page