"একজন ধনী ব্যক্তি মার্সিডিজ কিনলে ব্যাঙ্ক তাকে লোন দেয় ৮ শতাংশ শুদে। আর এক জন কৃষকের ট্রাক্টর কেনার ব্যাঙ্ক লোনে সুদের হার ১৩ শতাংশ। " শুরুর ১০ মিনিটের মাথায় সিনেমাহল জুড়ে শোনা গেল এই সংলাপ। শাহরুখ খানের মুখে। ইন্টারভ্যাল সহ সাড়ে তিন ঘন্টার সিনেমার পরতে পরতে এমন অনেক চমকই দিয়েছেন কিং খান।
কৃষক আত্মহত্যা থেকে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সেনার অস্ত্র কেনায় দুর্নীতি, অন্যায়ের প্রতিবাদে দেশরিবোধী হয়ে যাওয়া ও আরও একাধিক ইস্যু উঠে এসেছে এই সাড়ে তিন ঘন্টার সিনেমায় । তাই দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, এটা সিনেমা না রাজনৈতিক বক্তব্য?
শাহরুখ খানের জওয়ান এক কথায় ব্লকবাস্টার হিট। অনেকেই বলছেন পাঠানকেও ছাড়িয়ে যাবে এই সিনেমা। জনতা সিনেমা দেখে কাঁদছেন, উত্তেজিত হচ্চেন, কথা বলছেন, উৎসব করছেন। এ ছবি যেন তাদের মনের কথাই বলে দিচ্ছে। প্রশাসন বা সিস্টেমের ওপর এতদিন যে রাগ নিজেদের ভেতরে চেপে রেখেছিল দেশের জনতা, শাহরুখ ও অ্যাটলী রবিন হুড হয়ে যেন সেই রাগই ফুটিয়ে তুলেছেন বড় পর্দায়। যদি মৃণাল সেনের মত বলতে হয়, " এটা সিনেমা নয়, একটি রাজনৈতীক স্টেটমেন্ট"।
সিনেমায় শাহরুখের নাম আজাদ। যে আজাদ মেট্রো হাইজ্যাক করে, প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলে নিজের স্বার্থ বোঝা শিল্পপতির থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা আদায় করে। তারপর সেই টাকায় দেশের ৭ লাখ কৃষকের ব্যাঙ্ক লোন শোধ করে দেয় যাতে আর কোনও কৃষককে আত্মহত্যা না করতে হয়। তারপর সরকারি হাসপাতালের বেহাল অবস্থার হাল ফেরাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে গুলি করে প্রাইভেটের জায়গায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় সেই সরকারি হাসপাতালেই । ডিমান্ড রাখে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর জীবনের বদলে দেশের সব সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা পাঁচ ঘন্টার মধ্যে প্রাইভেট হাসপাতালের মত করতে হবে। হলে গমগম করে বাজে সংলাপ, "সরকার চাইলে পাঁচ ঘন্টাতেই দেশের হাল ধরতে পারে"
সিনেমার শেষের আগে ফোর্থ ওয়াল ভাঙলেন শাহরুখ। সরাসরি দর্শকদের চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন শাহরুখ খান । নিজের ভঙ্গিতে। তার রাগ ও হতাশা স্পষ্ট। বলছেন "বাইক থেক পেন কেনার জন্য যখন আমরা দশ বার তা জাচাই করে কিনি তখন ভোটের সময় পাঁচ বছর যারা আমাদের সরকার চালাবে তাদের আমরা যাচাই করি না কেন? যাচাই করতে হবে। তবেই আমরা স্বাধীন, আজাদ!" এই দৃশ্য দেখার পর অনেকের মনেই প্রশ্ন, তাহলে কী অবশেষে, এই সিনেমাতেই নিজের নীরবতা ভাঙলেন কিং খান ?
Comments