আজ জন্মাষ্ঠমী, শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি।
মথুরাতে রাজা কংসের প্রাসাদে বন্দি কংসের বোন দেবকী ও বাসুদেবের কোল আলো করে মধ্যরাতে ভূমিষ্ঠ হন শ্রীকৃষ্ণ। সেই রাতেই বাসুদেব নিজের সন্তানকে কংশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বৃন্দাবনে যশোধা আর নন্দরাজকে নিজের সন্তান হিসেবে দিয়ে আসে।
দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান শ্রীকৃষ্ণ। তার আগে সাতটি সন্তানকে মেরে ফেলে কংস মামা, কারণ সে নাকি দৈববাণী শোনে যে দেবকীর গর্ভজাত সন্তানের হাতেই তার মৃত্যু ঘটবে।
শ্রীকৃষ্ণের বাল্যবেলায় তিনি গোপাল নামেই সারা জগতে প্রসিদ্ধ। গোপালের দুই মা - গর্ভধারিনী মা দেবকী এবং প্রতিপালিকা মাতৃসমা যশোধা । দেবকী ও যশোধা সম্পর্কে দুই বোন।
জন্মাষ্ঠমীর আরো এক নাম পরিচিত - গোকুলাষ্ঠমী।
মথুরা এবং বৃন্দাবনে জন্মাষ্টমী উৎসব কয়েকদিন ধরে চলে, ঠিক যেমন পশ্চিমবঙ্গে দূর্গা পূজো পালিত হয়। এই অনুষ্ঠানে সব ছোট -বড় মন্দির সুন্দর সুন্দর ফুল, ফুলের মালা, নানান রকমের আলো দিয়ে সাজানো হয়ে।
মূলত আজকে রাতে ভক্তরা মন্দিরে গিয়ে ভিড় জমাবে, হরে কৃষ্ণ নাম করবে। মথুরা যেহেতু গোপালের জন্মস্থান, তাই সেখানে বিশেষ একটা প্রথা দেখা যায় - গীতা পাঠ করে সঙ্গে ছোট গোপালকে ঠিক এক জীবন্ত শিশুর মতো দোলনায় বসিয়ে দোলানো হয়।
বৃন্দাবনের গোকুলে গোপালের বড়ো হওয়া। সেখানেও আজ উৎসবের মেজাজ। কৃষ্ণ এবং তাঁর সঙ্গে গোপী সেজে নাচ আর গানে চলছে রাসলীলা।
বৃন্দাবনের বিখ্যাত প্রেম মন্দিরে শ্রী কৃষ্ণকে দুধ, দই, হলুদ দিয়ে সুন্দর করে ভক্তরা ভগবানকে স্নান করায়। ৫৬ রকমের খাবার, মিষ্টি দিয়ে গোপালকে প্রসাদ হিসেবে দাওয়া হয়ে। মথুরা এবং বৃন্দাবনের উৎসবে বিশেষভাবে প্রাণবন্ত এবং উৎসাহী হয়ে থাকে। এই সময় সেখানে একটি বিখ্যাত খেলা হয় - মটকা ভাঙা, যা অনেক উপরে একটা মাখন ভরা হাড়ি বাধা হয়, আর ভক্তরা একে অন্যের পিঠে চড়ে পিরামিড বানিয়ে শেষে একজনকে সবার উপরে চড়ে দাঁড়িয়ে উঁচুতে তারের সঙ্গে বাঁধা মাখনের হাড়িটা ভাঙে।
বিশ্বের নানান জায়গায় জন্মাষ্ঠমী পালিত হয়। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে এক এক রকম ভাবে আজকের দিনটা পালিত হচ্ছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে নাদিয়া জেলায় প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে গোপালকে পুজো করা হয়ে।
মায়াপুরের ইসকন মন্দিরে বড়ো করে জন্মাষ্ঠমী পালিত হচ্ছে। সেখানে বিদেশী ভক্তরা নাচ, গান, হরি নাম করে, সঙ্গে গোপালের মূর্তি নিয়ে নিজেদের ঘরে ঠিক যেন মায়ের মতো সন্তানসম গোপালকে আগলে রাখে।
নদীয়া জেলায় সনাতনী ধর্মের মানুষ বেশি। এই জেলাতেই জন্মগ্রহণ করেন শ্রীচৈতন্যদেব। হরিনামে মোহিত সাধারণ মানুষরাও জন্মাষ্ঠমী পালন করছে ঘটা করে।
ইদানিং এই পুজোর আয়োজন আগেকার সময়ের তুলনা বেশি প্রচলিত। এখন বলতে গেলে, প্রায় সব বাড়িতে গোপালের জন্মতিথি পালিত হয়। এই লক্ষণ দেখে কি বলা যেতে পারে সনাতনী ধর্ম বাড়ছে ?
নাকি রোজকারের একঘেয়ে দিনযাপনের মাঝে একটা দিন একটু অন্যভাবে আনন্দের মধ্যে উদযাপনের সুযোগ গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে? অথবা প্রবল অনিশ্চয়তার মধ্যে বছরভোর কাটিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন দেবতার কাছে, চাইছেন কয়েক মুহূর্তের জন্যে সমর্পণের শান্তি।
অন্যদিকে, এই একটা পুজোর সরঞ্জাম যোগান দেওয়া ব্যবসায়ীরাও একটু-আধটু লাভের মুখ দেখতে পারছেন। যেমন, জন্মাষ্ঠমীর দিন তালের দাম বেড়ে যায়। কারণ, বাঙালিরা জন্মাষ্ঠমী উপলক্ষে গোপালকে তালের বড়া , ক্ষির, মালপোয়া বানিয়ে নিবেদন করে শান্তি খোঁজেন।
Comments