২০১৬ সালের নোটবন্দির সময় থেকে সাধারণ ভারতবাসী নতুন এক বিপদের সম্মুখীন হয়। ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়া এবং প্রয়োজনে টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নেওয়ার সরল ব্যবস্থাটিকে প্রায় ভেঙে দেওয়া হয়। প্রায় সব শ্রেণীর গ্রাহকদেরই অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে বা খরচ মেটাতে বাধ্য করা হয়।
দুর্ভোগটি চরম পর্যায়ে পৌঁছায় কোভিড অতিমারির সময়ে। যখন রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার বাইরেও কিছু বিদেশী ব্যবসাদারদের জন্যে এই অনলাইল পেমেন্ট নামক একটি ব্যবস্থাকে সর্বজনীন করা হলো।
প্রগতির চিহ্ন হিসেবে অনলাইন ব্যাঙ্কিং চালু ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন সরকার সারা বিশ্বকে বার্তা দিলো যে ‘হম কিসিসে কম নেহি’; আমরাও এখন সুপার পাওয়ার ইত্যাদি।
তবে সাধারণ গ্রাহকদের একটি বিশাল অংশ এখনও এই আধুনিক নেট ব্যাঙ্কিং-এ সড়গড় হয়ে উঠতে পারেনি। কারণ, রাষ্ট্র বা ব্যাঙ্কিং সংস্থাগুলি তাঁদের গ্রাহকদের এই ভার্চুয়াল স্বর্গে ঠেলা মেরে উঠিয়ে তো দিলেন। কিন্তু যে সিঁড়ি দিয়ে এই উচ্চতায় পৌঁছানোর উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবে, সেই সিঁড়িটাই তাঁদের পায়ের নিচে নেই।
এই সুযোগটি ইদানিং পূর্ণমাত্রায় নিয়ে চলেছে অসংখ্য জালিয়াতেরা। প্রায় প্রতিদিনই খবর পাওয়া যাচ্ছে দেশের কোনো না কোনো গ্রাহকের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমানো টাকা একসঙ্গে সবটা হাপিস হয়ে যাচ্ছে। এই অপরাধের সুরাহা করতে নিযুক্ত পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখাকে অনেকেই তাই একটি অন্যতম ব্যস্ত বিভাগ বলে মনে করে অনেকে।
কিন্তু গ্রাহকদের দায় রয়েই যাচ্ছে। জালিয়াতি বা প্রতারনা থেকে বাঁচতে তাঁদেরও এবার সচেতন হওয়া দরকার। তার একটি উপায় জানিয়ে দেওয়া যাক।
প্রথমে এম-আধার নামে একটি অ্যাপ আপনাদের স্মার্টফোনে ইন্সটল করুন। ইন্সটলের পড়ে অ্যাপটি খুলে আধারের বায়োমেট্রিক অপশনে গিয়ে লক করতে হবে।
যখনই টের পাবেন ব্যাঙ্কে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে আপনার অজান্তে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে, বা তুলে নেওয়া হয়েছে, তাহলে তৎক্ষণাৎ ব্যাঙ্কে যান, খোঁজ করুন কে বা কী কারণে এই টাকাটিকে আপনার অনুমতি ছাড়া নেওয়া হয়েছে। জবাব মনঃপুত না হলে পুলিশে অভিযোগ জানান।
অভিযোগ দায়ের করবার সময়ে অতি অবশ্যই একটি কাজ করতে হবে। আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে যে আপনার অগোচরে টাকা গায়েব হয়েছে, তা প্রমাণ করবার জন্যে কাছাকাছি এটিএম থেকে আপনার অ্যাকাউন্টের মিনি স্টেটমেন্ট প্রিন্ট করে নেবেন।
এবার জেনে নিন কী কী করবেন নাঃ
আপনার আধার কার্ডের নম্বর বা কেওয়াইসি বিষয়ে কোনো তথ্য অপরিচিতের আসা ফোনেতে প্রশ্নের জবাবে বলবেন না। অবশ্যই জেনে রাখুন যে আপনার ব্যাঙ্ক থেকে এই ধরণের ফোন আসবে না। যারা আপনার এই বিবরণগুলি চাইছে, তারা আপনার অজ্ঞতা এবং লোভের সুযোগ নিয়ে সর্বস্বান্ত করতে এই ধরণের ফোন করে।
দ্বিতীয়ত, ব্যাঙ্ক বা আপনার মোবাইল ফোনের সার্ভিস প্রোভাইডারকে বাদ দিয়ে অন্যত্র কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি যদি আপনার আঙুলের ছাপ বা বায়োমেট্রিক চিহ্ন দাবি করে, তাহলে তা দেওয়ার আগে একবারের জায়গায় দশবার ভাববেন। ছাপ দিয়ে ভেবে কিন্তু কিন্তু বিশেষ কাজ হবে না।
Comments