বিশ্বভারতীর ফলককাণ্ডে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তার কড়া বার্তা, কোনো ভাবে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি মুছে দেওয়ার চেষ্টা হলে তা বরদাস্ত করা হবে না। ফলক-বিতর্কে এর আগেও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে চিঠি পাঠিয়ে ছিলেন রাজ্যপাল। এই বিষয়ে এবার সরাসরি মুখ খুলে, কর্তৃপক্ষ এবং উপাচার্যের দিকেই তোপ দাগালেন বোস।
বুধবার বেশ কয়েকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে রাজভবনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল। সেখানেই তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে বিশ্বভারতীর ফলক-বিতর্ক নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের আবেগ এবং অনুভূতি। গোটা ভারতের সংস্কৃতির প্রতিনিধি তিনি। এইভাবে ওনাকে কখনই উপেক্ষা করা উচিত নয়। ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে এই বিষয়ে জানতে চেয়ে তিনি চিঠি দিয়েছেন। এই চিঠির উত্তর পাওয়ার পরই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর হিসাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
ইউনেস্কো শান্তিনিকেতনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র হিসাবে ঘোষণা করার পর থেকেই এই বিতর্ক শুরু হয়েছে। উপাচার্য এই কাজের জন্য নিজে কৃতিত্ব নিতে চেয়েছেন তো বটেই, এবং আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাও তিনি তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি বিশ্বভারতীর তরফে ছাতিমতলা, উপাসনা গৃহ এবং রবীন্দ্রভবনের উত্তরায়ণের সামনে শ্বেতপাথরের ফলক বসানো হয়েছে। সেই ফলকে লেখা রয়েছে, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, এবং তার ঠিক নীচেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম লেখা রয়েছে। কিন্তু সেখানে কোথাও বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম নেই। বিতর্কের সূত্রপাত এই নিয়েই। শান্তিনিকেতন আশ্রম সঙ্ঘ এবং শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে; প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের কাছে চিঠি দিয়েছে। একই ভাবে বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের (ভিবিইউএফএ) তরফেও ইমেল করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ফলক-কাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ও রাজ্যপালকে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
বিশ্বভারতীর এই ফলক-বিতর্কে বিরল ঐক্য দেখা যায় শাসকদল তৃণমূল এবং বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ফলকের বিরোধিতা করেছিলেন। একে একে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পথ অবলম্বন করেই বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে আক্রমণ করতে শুরু করেন রাজ্যের বিরোধী দলের বিজেপি নেতারাও। রবিবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও উপাচার্যের এরূপ কাজে সমালোচনা করেছেন। সোমবার বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরা কড়া ভাষায় বিদ্যুতের সমালোচনা করেছেন।
পুজো কাটতেই, বিশ্বভারতীর ফলক-বিতর্ক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং উপাচার্য বিদ্যুৎকে আক্রমণ শুরু করেছিল তৃণমূল। সমাজমাধ্যমে পর পর শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা পোস্টে কর্তৃপক্ষের নিন্দা করছিলেন। অবিলম্বে ফলকে রবি ঠাকুরের নাম ফিরিয়ে আনা হোক দাবিও করেন তারা। সাংবাদিক বৈঠকে মমতাও এই ফলক-বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি বিশ্বভারতীকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার সুরে বলেন, পুজো ছিল বলে আমরা এই বিষয়ে চুপচাপ ছিলাম। কিন্তু এখন ওই ফলক সরাতে হবে এবং সেখানে রবি ঠাকুরের নাম ফিরিয়ে আনতে হবে। নাহলে আমাদের লোক ওখানে রবীন্দ্রনাথের ছবি বুকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করবে। তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্যই বিশ্বভারতী ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, আর ওনার নামই ফলক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Comentários