লিখছেন অনিন্দ্য দত্ত
প্রতি বছরই ১৫ই অগাস্টের দিন পিপলস ফিল্ম কালেকটিভ আয়োজন করে এক অন্যধারার চলচ্চিত্র উৎসবের। যার নাম দেওয়া হয়েছে 'ফ্রেমস অফ ফ্রিডম'। বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় স্বাধীনতার কাঠামো।
এই বছরে ফ্রেমস অফ ফ্রিডম চলচ্চিত্র উৎসব পা দিল ষষ্ঠ বছরে। উত্তম মঞ্চে সকাল দশটা থেকে রাত অবধি চলেছিল এই উৎসব।
এক অর্থে স্বাধীনতার বর্তমান কাঠামোটি তৈরি হয়, যখন আমাদের স্বাধীন দেশের প্রথম সংবিধান চালু হয়। সেটা ছিল ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি। ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের ১ নং ধারায় ছটি মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়। সেখানে বাক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সংগঠন করা, স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করা, স্বাধীন ভাবে বসবাস করা ইত্যাদি নানা অধিকারের কথা বলা হয়। তারপর ২ নং ধারায় কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। প্রথমে শর্ত ছিল দেশের সুরক্ষা। পরবর্তী কালে ১৯৬৩ সালে ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন কাউন্সিলের অধীনে ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড রিজিওনালাইজেশন কমিটির সুপারিশে সংবিধানের ১৯ নং অনুচ্ছেদে কিছু পরিমার্জন করা হয়। সেই পরিমার্জনের ২ নং ধারায় সুরক্ষার শর্তের সাথে যোগ হয় দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে। এরপরেও সংবিধানে নানা সময়ে নানা সংশোধন হয়, এবং নানা আইন প্রবর্তন হয়। তার ফল আজকে কী হয়েছে? সত্যি সত্যিই এই প্রশ্ন আমাদের কুড়ে কুড়ে খায়। স্বাধীনতার মানে কী? স্বাধীনতার জন্য লড়াই কি শেষ হয়ে গেছে?
তাই প্রতি বছরই দেশ জুড়ে স্বাধীনতার উদযাপনের কালে পিপলস ফিল্ম কালেকটিভ এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান চালায়। সেই অনুসন্ধানের সূত্র ধরে বেছে নিয়ে আসা হয় এমন কিছু সিনেমা, যা দর্শকের সামনে হাজির করে চিরন্তন এবং সমকালীন কিছু বক্তব্য যার মধ্যে দিয়ে দর্শকরা স্বাধীনতার অর্থকে নিয়ে কাঁটাছেঁড়া করার সুযোগ পান।
যেহেতু এটা চলচ্চিত্র। তাই দৃশ্যশ্রাব্য এই মাধ্যম, কোন পঠিত বা শ্রুত বক্তব্যের থেকেও, মননের অনেক গভীরে পৌঁছে যায় এবং স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে।
সাধারণ মানুষের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন যেমন যেকোনো শাসনব্যবস্থার একটি অবশ্যম্ভাবী রূপ, তেমনই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধও একটি অবশ্যম্ভাবী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র বাধ্য হয় তার শাসনপ্রণালীতে নানাবিধ পরিমার্জন বা সংশোধন করতে, যাতে সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার অধিকারকে আরও সুনিশ্চিত করা যায়। কিন্তু এটা সবসময় মনে রাখা দরকার যে রাষ্ট্র, বাধ্য না হলে কোনভাবেই এই অধিকার দেবে না, বরঞ্চ কেড়ে নেবে। যেমন সংবিধান সংশোধন ও তৎসম্পর্কিত আইন প্রণয়নে আমাদের অধিকার প্রসারিত হওয়ার বদলে ক্রমশ: সঙ্কুচিত হয়েছে। এটা এমনই এক অবিচ্ছিন্ন এবং নিরন্তর প্রক্রিয়া যা প্রতি মুহূর্তে ঘটতে থাকে এবং নতুন নতুন সংঘর্ষের জন্ম দেয়। সেই সংঘর্ষে সাধারণ গণতান্ত্রিক মানুষ যদি এক হয়ে না দাঁড়ায়, তবে ক্রমশ: তার স্বাধীনতা খর্ব হতে থাকে। বর্তমানে তেমনই এক পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা, যেখানে নিয়ত আমাদের সমস্ত অর্জিত স্বাধীন সত্ত্বা এবং অবস্থান বিপন্ন। শাসনযন্ত্রের এই ফ্যাসিস্ট রূপ ক্রমশ: আমাদের সমস্ত সত্তাকে এক ভয়ঙ্কর বিধিনিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেলার চক্রান্ত করে চলেছে। তার ফলে আমাদের স্বাধীনতা যেমন বিপন্ন, তেমনই বিপন্ন আমাদের মনন।
অর্ধসত্য ও মিথ্যার অনবরত প্রচারে আমাদের মনন আজ এমন এক বিস্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আমরা এতদিনের অর্জিত সমস্ত স্বাধীন সত্তাকে বিসর্জন দিয়ে, সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকে বিসর্জন দিয়ে, জাতীয়তাবাদী মাহাত্ম্যের অলীক টানে শাসনযন্ত্রের ক্রীতদাসে পরিণত হতে চলেছি।
এইরকম পরিস্থিতিকে মাথায় রেখেই এদিন দেখানো হয় পাঁচটি চলচ্চিত্র, যেগুলো সমকালীন পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত পরিসরে স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপের এমন কিছু কাহিনীকে তুলে নিয়ে এসেছে যা আমাদের দেখিয়ে দেয় কীভাবে আমাদের চারপাশের পরিচিত স্বাধীন পরিসর ক্রমশ: সঙ্কুচিত হয়ে আমাদের চেপে ধরেছে, আর চোরাবালিতে তলিয়ে যাওয়ার অনুভূতি নিয়ে আমরা হাঁসফাঁস করছি।
চৈতন্য তামাহানের 'কোর্ট' দেখলে আমরা টের পাই আমাদের অসহায় অবস্থার স্বরূপ। 'কোর্ট' বিচারব্যবস্থাকে নিয়ে ছবি। মূল চরিত্র নারায়ণ কাম্বলে একজন লোকসঙ্গীত শিল্পী। অবসর সময়ে তিনি বাচ্চাদের পড়ান। তিনি গান বাঁধেন, সুর করেন এবং গান করেন। ওঁদের চার-পাঁচ জনের দল আছে, যারা বিভিন্ন রকম খেটে খাওয়া মানুষের মহল্লায় গিয়ে তাদের গান শোনান। অর্থাৎ পুরোদমে একটি সাংস্কৃতিক দল। আমাদের চারপাশে এরকম বহু দল আছে, এবং ছিল। আজ তারা অনেকেই আমাদের কাছে খুবই বিখ্যাত। সলিল চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, এরকমই দুটি নাম। অর্থাৎ এতদিন আমাদের ধারণায় ছিল, এটা স্বাভাবিক ও জরুরি একটা সাংস্কৃতিক চর্চার ধারা। তামহানে দেখালেন যে সেই স্বাভাবিকতা এখন অপরাধ হয়ে গেছে। যখন প্রতিরোধের গান গাওয়ার জন্য আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার কেস কোর্টে দাঁড়ালো না তখন এ ছবির গায়ককে ইউএপিএ দেওয়া হল।
হ্যাঁ, ইউএপিএ এমনই একটি মহান আইন যা তৈরি হয়েছিল প্রায় স্বাধীনতার প্রাক্কালেই, ১৯৬৩ সালের একটি সুপারিশ থেকে। ১৯৬৭ সালে এই আইনটি প্রচলিত হয়। তারপর বহু পরিমার্জন এবং পরিবর্তন হয়ে আজকের এই ভয়ঙ্কর রূপটি নিয়ে আইন দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো মানুষকে পুলিশ কোনরকম প্রামাণ্য নথি ছাড়াই এই আইনে গ্রেফতার করতে পারে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে, এমন সংস্থান এই আইনে করা আছে। সুতরাং আমাদের স্বাধীনতার কাঠামোটি আসলে কতটা পলকা তা আমরা সিনেমার শেষে স্পষ্ট বুঝতে পারি যখন দেখি আমাদের জেলবন্দী করে বিচারব্যবস্থা দোলনায় দোল খাচ্ছে।
তার পরের ছবি 'ফান্ড্রি'তে আমরা পৌঁছে যাই এমন এক পরিস্থিতিতে যেখানে আমরা নিজের অবস্থান নিয়ে দোটানায় পড়ে যাই যদি আমরা তথাকথিত উচ্চবর্ণের সদস্য হই। নাগরাজ মঞ্জুলে অসাধারণ চিত্রনাট্য, সিনেমাটোগ্রাফি আর একগুচ্ছ অসাধারণ অভিনেতার মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরেন এই বর্ণবিভাজিত সমাজে স্বাধীনতার এক খণ্ডিত রূপ। একটি কিশোরের স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে, তার প্রেমে পড়া, তার প্রতিটি স্বাধীন ভাবনা বা ইচ্ছেকে কীভাবে এই বর্ণবিভাজিত সমাজ তার অদৃশ্য বাঁধনে বেঁধে ফেলছে, আর তার যন্ত্রণামুখর আর্তি আমাদের সামনে এক অব্যক্ত প্রশ্নের চিত্ররূপ হাজির করে যে, এই ক্রমশ: সঙ্কুচিত হয়ে আসা স্বাধীন পরিসরের মধ্যেও এত বিভাজন? শুয়োর এখানে একটা রূপক হিসেবে আসে, অস্পৃশ্যতার রূপক। শেষ দৃশ্যে শুয়োর ধরার মধ্যে দিয়ে জাবেয়ার সমস্ত লুকোনো স্বপ্ন তার বাস্তব অস্তিত্বের সামনে খানখান হয়ে ভেঙ্গে যায়। এর পরে যে ছবিটি দেখানো হয়, সেটা হল রীতেশ শর্মার 'ঝিনি বিনি চাদরিয়া'।
বেনারস শহরের এক জটিল আবর্তে শদাব এবং রানী তাদের বেঁচে থাকার লড়াই চালায়। তাদের স্বাধীন ভাবে উঠে দাঁড়ানোর জন্যে লড়াই। তিনটি সমান্তরাল ঘটনা নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে এই ছবির বুনোট তৈরি করে। রানী আর তার মেয়ে পিঙ্কি। রানী একজন নর্তকী। তার স্বপ্ন, সে একদিন সিনেমায় অভিনয় করবে। আর তার সাথে আছে বাবা, যে রানীকে ভালবাসে। আরেকজন শদাব। মুসলিম। শাড়ি তৈরি করে। শহর দেখাতে গিয়ে এক ইজরায়েলি মেয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। প্রেম হয়। এই সমস্ত চরিত্ররা এক প্রবল রাজনৈতিক আবর্তে ঘুরে চলে। এই রাজনৈতিক আবর্ত হল হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঘৃণার চাষ। বেনারসে বসবাসকারী দুই মুখ্য সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলিম ক্রমশ: তদের পরম্পরাগত সহমর্মিতা ভুলে গিয়ে ঘৃণা নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পরে। তারই আবর্তে বাবা, শদাব আর রানীর সমস্ত স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। এই ছবিও আমাদের একভাবে দাঁড় করিয়ে দেয় এক বাস্তবের মুখোমুখি যে, ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক ক্ষমতার আঘাতে আমাদের স্বাধীনতার কাঠামো ক্রমশ: ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে।
এর পর স্ক্রোলের জার্নালিস্ট অরুণাভ শইকিয়ার বক্তব্য মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে। উনি প্রথম থেকেই মণিপুর নিয়ে সরেজমিন রিপোর্ট করে আসছিলেন। মণিপুরের ইতিহাস ও বর্তমানের মাটির খবর দিয়ে শুরু করলেন, এবং ব্যাখ্যা করলেন কীভাবে এই সন্ত্রস্ত পরিবেশের সৃষ্টি হল। তিনি বলছিলেন মণিপুরে কুকি সম্প্রদায়ের কাছে ঐতিহ্যবাহী সেন্টেনারি গেটের কথা। যেটার একটা দিক কালো করে দেওয়ার ফলে কুকি সম্প্রদায় কীভাবে গর্জে উঠেছিল।
খুবই স্বাভাবিক ভাবে মণিপুরের এই সন্ত্রাসকে বুঝতে গেলে বুঝতে হবে সেখানকার ইতিহাস, সেখানকার ভৌগোলিক অবস্থান এবং জাতি নির্মাণে এই রাজ্যের ভূমিকাকে। তার সঙ্গে বুঝতে হবে এনআরসি-র দাবির তাৎপর্যকে এবং কীভাবে ভারত রাষ্ট্রের পাল্টা আক্রমণ কৌশল এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈরিতা তৈরি করে দিল।
শইকিয়া আরও বললেন যে, মায়ানমার থেকে আগত অভিবাসীদের সংখ্যাবৃদ্ধি, তার সাথে কুকি উপজাতিদের আলাদা রাজ্যের দাবী এবং শিডিউলড ট্রাইব হিসেবে পরিগণিত হওয়া স্বাভাবিক ভাবেই মেইতেই সম্প্রদায়কে সংখ্যাধিক্য হওয়া সত্ত্বেও অসুরক্ষিত করে তোলে। তিনি জানালেন যে সরকার বেশ কিছু কুকি সম্প্রদায়ের মানুষকে তাদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করছে কারণ তাদের বাড়িতে 'বেআইনি' অভিবাসীদের থাকতে দেওয়া হচ্ছিল। এর সাথে কুকি সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সাথে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যে ত্রিপাক্ষিক অস্ত্রবিরতি চুক্তি ছিল, যেটা আবার মেইতেই সম্প্রদায়ের বিরক্তি উদ্রেককারী, সেটাও বিজেপি পরিচালিত ডবল ইঞ্জিন সরকার রদ করে নেয়।
প্রশ্নোত্তর পর্বে শইকিয়া জানান যে মণিপুরের বেশ কিছু মন্ত্রী সরাসরি মেইতেই মিলিশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে। আর সিভিল সোসাইটি এবং সমস্ত বিরোধীদের চুপ করানো হয়েছে। যার ফলে এই বৈরিতার আশু কোন সমাধান সম্ভব নয়। এই সন্ত্রাস সম্পূর্ণভাবে সরকারি ব্যর্থতা। ভোটের ক্ষুদ্র স্বার্থে পুরনো ঐতিহাসিক বৈরিতাকে খুঁচিয়ে নতুন আকারে সংঘর্ষের জমি তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর নিশ্চুপ থাকা মানে সরকার এমনই কিছু চাইছে বলেই মনে হচ্ছে।
পরের ছবি কিশলয়ের 'আয়সে হি'। ছবি আবর্তিত হতে থাকে মিসেস শর্মা এবং তার পরিবারকে ঘিরে। এই ছবিটির বিষয় মূলতঃ পারিবারিক পিতৃতন্ত্র এবং নারীর উপর তার প্রভাব। মিসেস শর্মা, তাঁর ছেলের বউ, নাতনী এবং মিসেস শর্মার এক অসমবয়সী বন্ধু এক বিউটিশিয়ান, এই চার নারীর আন্তঃসম্পর্ক এবং তাদের নানা ঘাত প্রতিঘাতের অন্তর্দ্বন্দ্বকে ঘিরে কিশলয় আমাদের সামনে নারীর মুক্তির বা স্বাধীনতার এক অন্য চিত্র বর্ণনা করেন। স্বাধীনতার কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল পিতৃতন্ত্রের হাত থেকে মুক্তি। কিশলয় দেখিয়ে দিলেন এই পিতৃতন্ত্রের হাত কতটা লম্বা হতে পারে যে, ছোট ভাই তার থেকে বড় দিদিকে দৈহিক নিপীড়ন করার অধিকার পেয়ে যায় প্রেমের স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্যে। মিসেস শর্মা বিদ্রোহ করেন এবং পরিবার ত্যাগ করে দেখিয়ে দেন যে এই শক্তিশালী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।
শেষ ছবি অনামিকা হাকসরের 'ঘোড়ে কো জলেবি খিলানে লে যা রিয়া হু'। রিয়ালিজম এবং সারিয়ালিজমের মিশ্রণে তৈরি এই ছবির পটভূমি দিল্লী শহর। অনামিকা দীর্ঘ সময় জুড়ে পুরোনো দিল্লীর রাস্তায় বসবাসকারী এই মানুষদের দৈনন্দিন জীবনকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন। কে নেই সেই চিত্রায়নে। ভিখিরি, পকেটমার, ছোট কারখানার শ্রমিক, রাস্তার গায়ক, রাস্তার বিক্রেতা, নেশারু, গাঁজারু, এরা সবাই। অদ্ভুত এক পরাবাস্তব পরিসরে যেন বাস্তব ঠিকড়ে বেরিয়ে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। ঝাঁ চকচকে এক দুনিয়াতে কীভাবে এত অবাঞ্ছিত প্রাণ বসবাস করতে পারে সেই ঝটকাটাই অনামিকা আমাদের দিয়ে গেলেন। একজন ট্যুরিস্টগাইডের ভূমিকায় পাত্রু আমাদের একের পর এক হাজির করায় এমন এক আন্ডারওয়ার্ল্ডে, যার খবর কেউ রাখে না। কেউ জানে না তাদের স্বপ্নের খবর, তাদের যাপনের দুঃসহতা। স্বাধীনতার কাঠামো যেন নন ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতির মত দুমড়ে মুচড়ে যায়।
দর্শক বাড়ি ফেরে একরাশ দৃশ্যের ভার নিয়ে যা তার স্বপ্নরাজ্যে দীর্ঘ সময় জুড়ে হানা দিয়ে যাবে, চোখের সামনে দিয়ে ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই করে উড়ে যাবে ফ্যাতারুরা।
Comments