পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে যিনি রাজ্যপাল হয়ে এসেছেন সেই সি ভি আনন্দ বোস রাজ্য-রাজনীতির বিষয়টিকে বইয়ের এক একটি অধ্যায় হিসেবে ধরে এগোতে চান। যেমন, র্যাগিং কাণ্ডের জেরে তিনি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নিজের পছন্দসই প্রার্থীদের নিযুক্তিপত্র দিচ্ছিলেন, রাজভবনে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। সম্ভবত সেই অধ্যায়টি তিনি শেষ করেছেন।
এবার তিনি পরবর্তী অধ্যায়ে পৌঁছেছেন। ডেঙ্গি এবং রাজ্যের রাজধানীর পূরব্যবস্থা। নিজের কর্মপদ্ধতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই উনি একেবারে মাথা দিয়ে শুরু করেছেন। তিনি নবান্নকে চিঠি পাঠালেন এটা জানতে যে, একই ব্যক্তি দুটি পদে থেকে আদৌ কি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের পূরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, যাকে নিয়ে এই প্রশ্নটি রাজ্যপাল করেছেন, তিনি বিষয়টিকে রাজ্যপালের আওতাভুক্ত বলে মনেই করছেন না।
অবাক লাগে ভাবতে, যে ব্যক্তি রাজভবনের ভিতরে কলকাতা পুলিশের নজরদারি বিষয়ে এতটা সংবেদনশীল, তিনিই রাজ্যের প্রশাসনিক বিষয় নিয়ে এত কৌতূহলী হতে পারে। রাজভবনে যে কেন্দ্রীয় আরক্ষা বাহিনী থেকে পাহারাদার বসিয়ে তিনি রাজ্যতে থেকেই রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের বাতাবহ বজায় রেখে চলেছেন লাগাতার।
রাজ্যের পুরমন্ত্রী হিসেবেই ফিরহাদ হাকিম কলকাতা পুরসভার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন ২০১৮ সালে। ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস আরেকবার নির্বাচিত হওয়ার পরে তাঁকে আবাসন দফতরের মন্ত্রী পদ দেওয়া হয়। কিছুদিন পরে সেই দফতর থেকে সরিয়ে আবার পুরমন্ত্রী পদটিই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১১ সাল থেকে তিনি রাজ্যের পুরমন্ত্রীই ছিলেন। রাজ্যপালের কৌতূহল এটাই যে পুরমন্ত্রী এবং মেয়র কি একই ব্যক্তি হতে পারেন?
ফিরহাদ হাকিম এই মুহূর্তে দিল্লীতে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যান্য নেতা-নেত্রী সহ রাজ্যের বঞ্চিত জব-কার্ড হোল্ডারদের নিয়ে কেন্দ্রের বকেয়া টাকা না দেওয়ার প্রতিবাদে তিনি সামিল।
তবে কলকাতা ছাড়বার আগে তিনি পরিষ্কার বলে গেছেন যে রাজ্যপালের কৌতূহল মেটাতে তিনি আদৌ আগ্রহী নন। তিনি জানিয়েছেন, পূর্বতন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখর এমন কৌতূহল প্রকাশ করে নবান্নে চিঠি পাঠিয়েছে। “আমি কী ভাবে মন্ত্রী এবং মেয়র পদে রয়েছি, তা আমার মুখ্যমন্ত্রী জানলেই চলবে। রাজ্যপালের তা না জানলেও হবে,” ফিরহাদ হাকিম বলেছেন।
নবান্ন থেকেও রাজ্যপালের এই চিঠির কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। তবে কলকাতার এক প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিএম-এর রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য রাজ্যপালের কৌতূহলের যথার্থতা খুঁজে পাচ্ছেন। ভারতীয় সংবিধানের উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেছেন যে রাজ্য সরকারের মন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অংশ হলে স্বায়ত্তশাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
জানা গেল, উনি এই বিষয়টি নিয়ে একটি মামলাও করেছিলেন। এখনও সেই মামলার শুনানি হয়নি।
Comments