তিন নম্বর চন্দ্রযানের সফল উৎক্ষেপণ যে আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদি-সরকারের কৃতিত্ব হিসেবে দেখানো হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। কিন্তু বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের সাফল্যের পিছনে থেকে যাচ্ছে একাধিক বিতর্ক। এমনিতে, ইসরোর বিজ্ঞানীরা সারা বিশ্বের মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত পেশাদারী বেতনের মাত্র পাঁচ ভাগের একভাগ বেতন পান। পাশাপাশি, চন্দ্রযানের সাফল্যে সারা ভারতে উৎসবের বাতাবরণেও ইসরোয় যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী সংস্হা হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের ২৫০০ কর্মীর বাকি থাকা বেতনের সুরাহা এখনও হল না।
রাঁচির ধুরওয়ায় অবস্হিত এইচইসি-র ওয়ার্কশপ। এই সংস্হার ইঞ্জিনিয়াররাই মহাকাশযানের লঞ্চপ্যাড তৈরি করেছে। অভিযোগ, গত ১৭ মাস বেতনহীন এখানকার কর্মীরা। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের বেতন না মেটালে ঝাড়খণ্ডের রাজভবনে জমায়েত করবেন বলে এখানকার শ্রমিক সংগঠনগুলি জানিয়েছেন। তাদের দাবি, কেন্দ্র হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের পুনরুজ্জীবনের প্যাকেজ ঘোষণা না করলে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি সহ, নানান আন্দোলন কর্মসূচি নেবেন তারা। এমনকি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এইচইসি বাঁচাতে কেন্দ্র তৎপর না হলে - রাঁচির বিজেপি অফিস ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছে তারা।
সংবাদ সংস্হা সূত্রে খবর, ইসরোর বেশ কিছু প্রকল্পে যন্ত্রাংশ তৈরির বরাত পেয়েছে ঝাড়খণ্ডের সংস্হাটি। এর আগে ২০২২-এর ডিসেম্বরে নানান গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে সংস্হাটি। তৈরি হয়েছিল মোবাইল লঞ্চিং প্যাড। কিন্তু পৌঁছায়নি পেমেন্ট।
এইচইসি, কেন্দ্রের ভারী শিল্প মন্ত্রকের অধীনে থাকা ভারতের পুরনো ইস্পাত কারখানার সরঞ্জাম সাপ্লাই করা একটি পাবলিক সেক্টর।
চন্দ্রযান নিয়ে সাফল্যে উল্লসিত এখানকার কর্মী আধিকারিকরা। অবশ্য চন্দ্রযান -৩ প্রকল্পের সরঞ্জাম সাপ্লাই দেবার আগে এখানকার আধিকারিক ও পরিচালকরা ভারী শিল্প মন্ত্রকের কাছে ১০০০ কোটি টাকার কার্যকরী মূলধন চেয়েছিল। কিন্তু তা পাওয়া যায়নি। ফলত, এইচইসি-র কর্মীদের বেতন বন্ধ রেখে খরচ টানতে হচ্ছে।
এদিকে, ইসরোর কর্মীরা বেতন পাননি বলে যে খবর শোনা যাচ্ছে, তা আসলে এইচইসি-র ২৫০০কর্মীর দুরাবস্থার খবর। যা নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক বাক-বিতন্ডা শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মেটালার্জিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টস ইন্ডিয়া (মেকন) লিমিটেড চন্দ্রযান ৩-এর লঞ্চিং প্যাড ডিজাইন করেছিল। এইচইসি তা তৈরি করে। বিরোধীদের অভিযোগ, দুটি সংস্হাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না কেন্দ্র। প্রশ্ন হল, তাহলে কি রাষ্ট্রয়ত্ব এই সংস্হা দুটির বেসরকারীকরণের প্রচেষ্টাই আসলে পেমেন্ট না দেবার কারণ? অথচ, ইসরো সহ নানা সংস্হার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এইচইসি।
বছর দুয়েক আগে নীতি আয়োগ এইচইসি-তে সমীক্ষা করে, রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তের কথা জানালেও, ঝুলে আছে সিদ্ধান্ত। আর তাতেই ঝুলে আছে এইচইসি-র কর্মীদের ভাগ্য। জটিল পরিস্হিতিতে চন্দ্রযানের সফল প্রকল্পের অংশিদার হয়েও, ১৭ মাস ধরে বেতনহীন হয়ে আছেন এই সংস্হার কর্মীরা।
Comentarios