top of page

EXCLUSIVE : 'দরিদ্র রেল-হকারের আন্দোলন' ও সেই রাতে ‘সচক্ষে সবটা দেখা’এক লোকো পাইলটের অভিজ্ঞতা

বহুকাল পর রেলে হকারদের আন্দোলন জমাট বাঁধলো। তথাকথিত স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়নের বাইরে এই আন্দেলনের নেতৃত্বে 'জাতীয় বাংলা সম্মেলন'। হকাররা দখল করলেন হাওড়া স্টেশন চত্বর। হল আরপিএফের লাঠিচার্জ। লাগাতার উত্তাল স্টেশনে ট্রেন নিয়ে পৌঁছলেন এক ইঞ্জিন-ড্রাইভার। ফিরে গেলেন অন্য রুটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ড্রাইভার শোনালেন শনিবার রাতের গল্প।


ইঞ্জিন ড্রাইভারের চোখে হকার আন্দোলন


শনিবার ডাউন ৩৭২৭৮ ব্যান্ডেল-হাওড়া লোকাল নিয়ে রাত ৭:৪৫-এ যাত্রা শুরু করেছিলাম। হুগলি ঢোকার আগেই লক্ষ্য করলাম কয়েকশ মোবাইলের আলো লাইনের উপর ইতস্তত ছোটাছুটি করছে। কিছু একটা বিপদের আঁচ পেয়ে ইমারজেন্সি ব্রেক মারলাম। হেডলাইটের আলোয় দেখলাম জনা কুড়ি যুবক ক্যাবের দিকে মারমুখি হয়ে ছুটে আসছে। তাড়াতাড়ি ক্যাবের দরজা বন্ধ করে নিজেকে সুরক্ষিত করলাম। ওদের মধ্যে কয়েকজন বলল , 'কোনও গাড়ি চলবে না।' অচিরেই বুঝলাম এরা বিপজ্জনক নয়,এরা নিতান্তই সৎ উপায়ে উপার্জন করা হকার।


কিছুসময় পরে ওদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম ওদের পেটে লাথি পড়েছে। বললাম - 'তোমাদের হকারি বন্ধ হলে আমরা যাতায়াতের পথে চা-ঝালমুড়ি খাব কি করে?' এতক্ষণে ওরা বুঝল আমিও পেটের দায়েই কাজ করছি! ওদের মধ্যেই একজন বলল -"আপনার খাবার বা জল লাগলে বলবেন, এনে দেব।"

এইরকম অবরোধকারী আমি প্রথম দেখলাম। সাধারণত এরা আমাদের সিস্টেমের হত্তাকত্তা ভেবে আক্রমণ করে থাকে। চায়ের কথা শুনে খিদেটা চড়বড়িয়ে উঠল। একজন হয়তো মনের ইচ্ছাটা পড়ে ফেলল। দৌড়ল দূরে স্টেশন থেকে চা আনতে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের আনা চা নিতে হল।


ঘন্টা দেড়েক বাদে ট্রেন ছাড়ল। একটা চাপা টেনশন কাজ করতে লাগল। হাওড়া থেকে আবার রাত ৯:৪২-এর আপ ৩৬৮৫১ বর্ধমান লোকাল নিয়ে যেতে হবে। কোনও মতেই আমি সময়ের মধ্যে পৌঁছতে পারব না। হাওড়া পৌঁছলাম রাত ১০:০৪-এ।


ক্যাব থেকে নামার আগেই দেখলাম অফিসের লোক চাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বলল, তোমার গাড়ি অন্য ড্রাইভার নিয়ে গেছে। তোমাকে রাত ১০:১০-এর আপ ৩৬৮৫৩ বর্ধমান নিয়ে যেতে হবে। গাড়ি ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাড়িয়ে আছে। কিছুই আর খাওয়া হল না। যতটা সম্ভব সময় বাঁচিয়ে দৌড়লাম।


অপেক্ষারত শিক্ষিত ভদ্রলোক যাত্রীরা টিটকিরি দিয়ে বলল 'এতক্ষণে সময় হল!' কেউ কেউ আবার বলল 'কেন সব বেসরকারী হওয়া দরকার।' কোনও কথায় কান না দিয়ে গাড়ি চেক করে রাত ১০:২১ মিনিটে হাওড়া ছাড়লাম। বর্ধমান পৌঁছলাম রাত ১:৪৫-এ।


সাইন অফ করে রাত ২:১৫-তে শুতে গেলাম। খাওয়ার কথা আর ভাবলাম না। কারণ, সকাল ৭ টার ডাউন ৩৭৮২ হাওড়া মেইন লাইন লোকাল নিয়ে যেতে হবে। হাতে মাত্র সাড়ে ৪ ঘন্টা সময়। কিন্ত মনে রয়ে গেল ওই এক কাপ চা।

Comments


bottom of page