সুমিত দাস , সাংবাদিক
আলোচনায় সিসিটিভি। নজরদারি, ইংরেজিতে সার্ভিলেন্স। সিসিটিভি সারা বিশ্বের নেটিজেনদের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে অনেক আগেই। এখন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে র্যাগিং ও ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় - কলকাতা সহ বাঙালি আড্ডার মূল বিষয় হয়ে উঠেছে 'নজরদারি'।
সাধারণের উদ্বেগ ও বিতর্কের কেন্দ্রে আসা সিসিটিভিতে নজরদারি বাড়ছে বটে, তাতে অপরাধ বা অপরাধ প্রবণতা কি কমছে? এই বিতর্ক খানিক সরিয়ে রেখে দেখা যাক, বিশ্বব্যাপী কোন কোন দেশ সিসিটিভি-নজরদারি ব্যবস্হা জোরালো করেছে। ২০২৩ সালে, কোন দেশের কাছে আছে সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি?
নজরদারি ডিভাইস দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, অপরাধের তদন্ত, তদন্তের তথ্য নির্ভুল করা, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় লক্ষ্যে নজরদারি ক্যামেরা বসলেও, বিশ্বব্যপী নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারের প্রশ্ন নিয়েও দেশে দেশে জনমত তৈরি হয়েছে ও হচ্ছে। সিসিটিভি বা নজরদারি ডিভাইস নিয়ে ইদানিং নানান সমীক্ষাও সামনে আসছে।
বিভিন্ন দেশে জাতীয় নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিয়ে আজকাল নজরদারিতে ব্যপক বরাদ্দ হয়। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে,
চিনে আছে ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি সিসিটিভি
চিনের পরে সর্বোচ্চ সংখ্যায় সিসিটিভি ব্যবহার করা দেশ আমেরিকা (৫ কোটি)
ইংল্যান্ড (৫০লাখ)
জাপান (৫০ লাখ)
ভিয়েতনাম (২৬ লাখ)
ফ্রান্স (১৬.৫ লাখ)
দক্ষিণ কোরিয়া (১০.৩লাখ)
নেদারল্যান্ড (১০লাখ)
নাগরিকদের বা জনসংখ্যায় মাথাপিছু হিসেব ধরলে বিভিন্ন দেশের প্রতি ১০০ জন পিছু সিসিটিভির একটা সর্বোচ্চ গড় সংখ্যাও পাওয়া যায়।
আমেরিকায় প্রতি ১০০ জনে ১৫.২৮ টি নজরদারি ক্যামেরা
সেখানে ১০০ জন প্রতি চিনে ১৪.৩৬
ইংল্যান্ডে ৭.৫, জার্মানি ৬.২৭
নেদারল্যান্ড ৫.৮
অস্ট্রেলিয়া ৪
জাপান ২.৭
ফ্রান্স ১.৪৬
দক্ষিণ কোরিয়া ১.৯৯
বোঝাই যাচ্ছে, নানান দেশে জনসংখ্যা আলাদা, জনসংখ্যার ঘনত্ব আলাদা। সেক্ষেত্রে নজরদারির আওতা বিভিন্ন এলাকায় ছোট বা বড়।
১০০০ জন নাগরিক পিছু বিশ্বের সর্বাধিক নজরদারি ক্যামেরা ব্যবহারকারী শহরগুলোর যে তালিকা পাওয়া যায়, তার সেরা ১২ নির্বাচন করলে দুটি ভারতীয় শহর তালিকায় স্হান পায়। বলাই বাহুল্য, জনসংখ্যার ভিত্তিতে এই শহর দুটিতেই ভারতের সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি আছে। এক্ষেত্রে প্রতি ১০০০ নাগরিক পিছু শহর গুলিতে নজরদারি ক্যামেরার তালিকায় সবার ওপরে :
চিনে তাইয়ুন (১১৭)
চিনের উক্সি (৯০.৫)
লন্ডন (৭৩.৩)
ভারতের ইন্দোর (৬৪.৪)
চিনের চাংশা (৫৫.৮)
বেইজিং (৫৫)
চিনের হ্যাংঝৌ (৫১)
চিনের কিগদাও(৪৫.৬)
চিনের কুনমিং (৪৪)
চিনের জিয়ামেন (৩৯.৬)
চিনের হারবিন (৩৮.১)
সেরা ১২-র তালিকার শেষ শহর ভারতের হায়দরাবাদ। যেখানে প্রতি ১০০০ জন নাগরিক পিছু নজরদারি ক্যামেরার সংখ্যা ৩৬.৫। রাজধানী শহর হিসেবে এই তালিকায় আছে স্রেফ বেইজিং ও লন্ডন।
সময় যত এগোচ্ছে, প্রায় সব দেশই ট্রাফিক ও নিরাপত্তার পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করতে চায়। ফলে সিসিটিভির প্রযুক্তি রোজই উন্নত হচ্ছে। এনালগের দিন পেরিয়ে পুরনো ক্যামেরা ডিজিটাল হচ্ছে। আসছে আরো স্বচ্ছ ছবির ক্যামেরা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝার ওপর নজরদারিতেও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নজরদারি ক্যামেরার প্রয়োগ বাড়ছে।
নজরদারি ক্যামেরা লাগানোর ক্ষেত্রে সারাবিশ্বেই পাবলিক প্লেস, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, অফিস, পার্ক, বহুমানুষের মিলিত হওয়ার জায়গাই গুরুত্ব পেয়েছে। তেমনি, ব্যক্তিগত পরিসর কোনটা, কোথায় ব্যক্তিগত পরিসর আক্রান্ত হচ্ছে বা আক্রান্ত হতে পারে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে সর্বত্র।
コメント