পেশায় মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ সাহনাওয়াজ আলমের জানা আছে কীভাবে রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে উন্নত বিস্ফোরক বানাতে হয়, যাকে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইডি) বলা হয়।
দিল্লী পুলিশের স্পেশাল সেল এই বিস্ফোরণ বিশেষজ্ঞকেই আটক করলো আজ মঙ্গলবার ৩রা অক্টোবর। এই প্রযুক্তিবিদদের থেকে যতটুকু জানা গেছে, তাতে সরকারের উগ্রপন্থী-বিরোধী বিভাগের দুঁদে গোয়েন্দারাও বিস্মিত।
জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে নাগপুরে এনআইটি থেকে বি.টেক অধ্যয়নের সময়ে ব্লাস্টিং, ব্লাস্ট ডিজাইন এবং পাথরে বিস্ফোরণ ঘটানোর বিভিন্ন নতুন তথ্য নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেছেন সাহনাওয়াজ আলম। এবং সেই বিদ্যা উনি ইতোমধ্যেই কাজে লাগিয়েছেন।
আলমের ফোন থেকে এমন প্রচুর তথ্য পাওয়া যায় যাতে সহজপ্রাপ্য রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করে আইডি প্রনালির বিভিন্ন রেসিপি পাওয়া গেছে। সেই রাসায়নিক পদার্থগুলির মধ্যে রয়েছে হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড, অ্যাসিটোন, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দিয়ে বিস্ফোরক পদার্থের দানা (ক্রিস্টাল) তৈরি হতে পারে, যা ফাটলে অন্তত ৬০ মিটার ব্যাসার্ধের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আলমের সহযোগী আরসাদ ওয়ারসি আরও গুণধর। মেকানিক্স নিয়ে বি.টেক শেষে তিনি মার্কেটিং অ্যান্ড অপারেশনস নিয়ে এম.বিএ করে। আপাতত উনি জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্টে ইসলাম রীতি প্রয়োগ নিয়ে চর্চা করছেন। জামিয়া নগরে একটি প্রতিষ্ঠানে উনি পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত। দিল্লী পুলিশের স্পেশাল কমিশনার এইচজিএস ঢালিওয়াল জানিয়েছেন যে এই ওয়ারসি বাড়িতে বিজ্ঞান এবং অঙ্কের টিউশনিও দেন।
ওয়ারসি পুলিশকে জানিয়েছেন যে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.টেক হওয়ার পরে ২০১৬ সালে জামিয়া নগরে এসে তাঁর সঙ্গে আলমের আলাপ হয়।
দিল্লী পুলিশের সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে আলম ২০১৬ সালে দিল্লী এসে শহরের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় আবুল ফজল এনক্লেভে থাকতে শুরু করেন। শাহিনবাগে নিয়মিত ধর্মীয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এখানেই ওনার সঙ্গে মহম্মদ রিজভি আশরফের আলাপ হয়। দুজনে মিলে তারপরে টেলিগ্রাম এবং অন্যন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পাকিস্থানে আইএসআইএস-এর সমর্থনে বিভিন্ন প্রচার চালান।
রিজভি আশরফের জন্ম সৌদি আরবে। ২০০৯-তে আরবিতে আলিমিয়ত (উচ্চ-মাধ্যমিক সমতুল্য) উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৭ সালে গাজিয়াবাদ/নয়ডা থেকে ইনফরমেশন টেকনোলজি নিয়ে বি.টেক পাস করেন।
এই সময় থেকেই আইএস-এর হ্যান্ডলারের নির্দেশে আলম এবং ওয়ারসি বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজকর্ম শুরু করে। বিভিন্ন জায়গা নিরীক্ষণের পরে টার্গেট কিলিং-এ জন্যে আইডি স্থাপন করতে সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠেন। এরপর সেই হ্যান্ডলার তাঁদের আইএসআইএস-এ যুক্ত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
এই হ্যান্ডলারের নির্দেশেই এনারা লাভাসা, মহাবালেশ্বর, গোয়া, হুবলি কর্ণাটকের বনাঞ্চল, উডুপি, কেরালা,ভালসাড অভয়ারণ্য, নাল্লামালা পর্বতশ্রেনী এবং চান্ডাউলি সহ পশ্চিম ঘাটের বিভিন্ন এলাকায় ডেরা বানান।
দিল্লী পুলিশের কাছে এই জায়গাগুলিকে নির্দিষ্ট করা মানচিত্রগুলি উদ্ধার করেছে। দেখা যাচ্ছে এই সন্দেহভাজনেরা উত্তরাখণ্ড এবং রাজস্থানের দূরবর্তী এলাকাতেও আইইডি পরীক্ষা করেছেন।
রবিবার যখন দিল্লীর ডেরা থেকে পুলিশ এঁদের গ্রেফতার করে, তখন পাউডার, রাসায়নিক পদার্থ সহ আইডি বানাবার বিভিন্ন উপাদানও খুঁজে পান। সেগুলিকে ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে যে এঁদের থেকে প্রচুর পরিমাণে দেশলাই বাক্স উদ্দার হয়েছে। বিস্ফোরক বানানোর মশলা লোহার পাইপে ঠেসে ভরে এঁরা প্লাস্টিক টেপ দিয়ে মুখগুলি আটকে দিচ্ছিলেন।
বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্যে চীন থেকে আসা রিমোট-চালিত এলইডি আলো ব্যবহার করতেন এঁরা। টাইমারও বানিয়েছেন। এঁদের ডেরা থেকে প্রচুর ব্যাটারি এবং কানেক্টরও উদ্ধার করেছে দিল্লী পুলিশ। এগুলো আইইডি-র জন্যে ব্যবহার করা হয় বলে পুলিশ সুত্রে খবর।
Comments