নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর প্রপৌত্র চন্দ্র বসু আজ বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে লেখা একটি চিঠির মাধ্যমে বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক আনুষ্ঠানিক ভাবে ভাঙলেন। এমনিতেই বর্তমান বিজেপি-র কার্যক্রমে চন্দ্র বসু ক্রমশ নেপথ্যে চলে গেছিলেন।
সেই অভিমানই ফুটে উঠেছে তাঁর ইস্তফাপত্রে। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন তা আর পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বিজেপি-র সাংগঠনিক স্তরে চন্দ্র বসুর এই ইস্তফায় বিশেষ প্রভাব পড়বে না বটে। তবে এই ইস্তফার মধ্যে থেকে একটা কথা পরিষ্কার।
বিরোধী রাজনীতি বলতে বিজেপি ইদানিং যেভাবে শুভেন্দু অধিকারী-কেন্দ্রিক ব্যক্তি রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে, তার থেকে রাজ্য স্তরে বিজেপি-র সামগ্রিক দিশায় বড় কোনো উদ্দেশ্য সম্ভবত পূরণ সম্ভব নয়। রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে বিশেষ ব্যক্তিদের নাস্তানাবুদ করবার যে নিন্দাসুচক রাস্তায় প্রধান বিরোধী নেতা হেঁটে চলেছে, তাতে বিজেপি-র লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে কিনা, তা লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে তত রাজ্যবাসীর কাছে পরিষ্কার হবে।
চন্দ্র বসু চেয়েছিলেন তাঁর প্রপিতামহ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শকে বিজেপি-র মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে ‘আজাদ হিন্দ মোর্চা’ গঠন করা হোক। কিন্তু ধর্ম-কেন্দ্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী বিজেপি-র পক্ষে নেতাজীর মতো উদারবাদী দূরদৃষ্টিমূলক ভাবনাকে গ্রহণ করবার মানসিকতা কোনোদিনই ছিল না। এই কথা চন্দ্র বসু বহুদিন আগে উপলব্ধি করলেও এতদিন মেনে নিতে পারছিলেন না।
চিঠিটিতে তিনি লিখছেন, “বাংলার মানুষের কাছে বিজেপি কেমন ভাবে পৌঁছাতে পারে, তার বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয়েছে।“ স্বাভাবিক ভাবেই একটা কথা স্পষ্ট হচ্ছে – বিজেপির মঞ্চ ব্যবহার করে চন্দ্র বসুকে প্রচারের কেন্দ্রে
আনতে দেওয়া যাবে না। দলীয় স্তরের এমন চিন্তার কারণেই চন্দ্র বসুকে অগ্রাহ্য করেছে তাঁর পছন্দের দল।
২০১৬ সালে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে হারবার পর থেকেই রাজ্য বিজেপি-র এই প্রাক্তন সহ-সভাপতি প্রায় বাতিলের পর্যায়ে চলে যান। ২০২০ সালে তাকে সহ-সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০২১ সালে যখন তিনি সর্বসমক্ষে অভিযোগ জানান যে কেন্দ্রীয় সরকার হেফাজত থেকে ‘নেতাজীর টুপি’ চুরি হয়ে গেছে। সেই অভিযোগকে ‘ভুল’ বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় সরকার।
চন্দ্র বসুর ইস্তফা নিয়ে বিজেপি-র নেতৃস্থানীয়রা বিশেষ রা কাড়ছেন না। এনাদের অনেকের মত, নতুন করে প্রচারের আলোয় আসবার জন্যে চন্দ্র বসু এমন ঘটা করে ইস্তফা দিলেন।
Comments