শেষ অবধি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী ১০০ দিনএর কাজ এবং গ্রামীণ আবাস যোজনায় পশ্চিমবঙ্গের বকেয়া অর্থরাশি বিষয়ে মুখ খুললেন। অর্থাৎ, বিজেপি-র অন্যান্য নেতাদের কথায় প্রতিধ্বনি তুললেন। বললেন প্রকল্প রূপায়নে দুর্নীতি হয়েছে, সিবিআই সেই দুর্নীতির তদন্ত করবে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি জানিয়ে দিলেন তদন্ত হলে কোনো আপত্তি নেই।
এতদিন বাদে, যখন ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের জব হোল্ডার এবং বিপন্ন পরিবারের সদস্যরা শেষ অবধি বাসে করে দিল্লী পৌঁছেছেন, জবাব চাইতে তখন গিরিরাজ সিং জানাচ্ছেন টাকা নয়ছয় হয়েছে। এই অভিযোগ যদি এতটাই দুর্ভেদ্য হতো, তাহলে এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কেন সিবিআই-এর তদন্তের কথা বলা হলো না?
সিবিআই তদন্তের এই হুমকি যে বিলম্বেরই অজুহাত, তা উপলব্ধি করেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিলেন যে, সিবিআই তদন্তে তাঁর দল এবং রাজ্য সরকারের কোনো আপত্তি নেই। তবে সেই তদন্ত আদালতের পর্যবেক্ষণে হতে হবে।
গিরিরাজ সিং নিজের সিদ্ধান্তহীনতা লুকাতেই অভিযোগ করেন যে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব-কার্ড বিলি করা হয়েছে। এবং এই জব-কার্ড দেখিয়েই প্রচুর টাকা ‘চুরি’ করা হয়েছে। এবং পাল্টা দাবি রাখেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে, “টাকা ফেরত দিন।“
অভিযোগের তীরগুলি আজ কেন যে তাঁর মুখ থেকে বার হচ্ছে, অথবা তাঁকে দিয়ে বলানো হচ্ছে, তার উত্তর জানা নেই। তবে ওনার বক্তব্য, ১০০ দিনের কাজের অন্তর্গত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী রূপায়ন দেখতে যাওয়া পর্যবেক্ষক দলকে নাকি বলা হয়েছিল, ‘গাছ হাতিতে খেয়ে ফেলেছে’! গিরিরাজ সিং নিজেই উল্টে অভিযোগ করেন যে আবাস যোজনায় “প্রকৃত গরীব যারা, তাঁরাই বঞ্চিত হয়েছেন।”
এই কথাগুলি এত দেরি করে জানানোর কী ব্যাখ্যা তা কেন্দ্রীয় সরকারই জানে। তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রস্তাব দিয়েছেন, যে চারটি জেলায় দুর্নীতি হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানাচ্ছেন, সেগুলি বাদ দিয়ে বাকি জেলার মানুষদের জন্যে প্রাপ্য টাকা কেন্দ্র দিয়ে দিক।
গিরিরাজ সিং বিজেপি-র দরাজ হাত নিয়েও দুই-চার কথা বলেছে, ওনার হিসেবে ২০২২ সালের মার্চমাস অবধি কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে ৫৪ হাজার ১৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। সেই তুলনায় পূর্বতন ইউপিএ সরকারের থেকে পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছিল মাত্র ১৪ হাজার কোটি টাকা।
সেই হিসাবের সূত্র মেনেই বিহারের এই বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানালেন যে আবাস যোজনায় উনি, থুড়ি, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে(ন)। ইউপিএ আমলে বরাদ্দ হয়েছিল ৫,৪০০ কোটি টাকা। গ্রামীণ সড়ক যোজনা খাতেও বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গকে দিয়েছে ১১হাজার কোটি টাকা। আর ইউপিএ সরকার ৪,৪০০ কোটি টাকাতেই দায়িত্ব পালন করেছে।
কিন্তু এইসব কথা এবং টাকার হিসাব সর্বসমক্ষে এনে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী কী বলতে চাইছেন? ২০২২ সালের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর মন্ত্রকের থেকে নিজের প্রাপ্যটুকু আশা করবে না? গিরিরাজ সিংহের অভিযোগের উত্তরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু একটা কথাই জানতে চেয়েছেনঃ ৪টি জেলায় দুর্নীতি হয়েছে বলে বাকি ১৬টি জেলা ভুক্তভোগী হবে কেন?
এর পাশাপাশি বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হওয়া শিশুদের পরিবারের শোক প্রসঙ্গে বলেন, যে বিজেপি-র মন্ত্রী যদি ব্যঙ্গ দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তহীনতা না আড়াল করতেন, এবং নিজের অহংকারকে প্রাধান্য না দিতেন, তাহলে ওই নিস্পাপ শিশুগুলির অকালে প্রাণ ঝরতো না।
Kommentare