সিবিআই-ইডি’র অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের স্বার্থে অনুব্রত মণ্ডল এখন বিচারাধীন বন্দি। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের এই প্রাক্তন সভাপতির প্রতাপে বিরোধী কণ্ঠস্বর প্রায় স্তব্ধ ছিল। নিজের দলের এবং অন্য দলের সদস্যেরা বীরভূম জেলায় তাঁর প্রতাপে প্রায় নীরবই ছিলেন প্রায় এক দশক।
কিন্তু ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকেই এই বিরোধী কণ্ঠস্বর ক্রমশ চড়া হয়ে উঠছে। তৃণমূল কংগ্রেসে যারা অনুব্রতের প্রতি বিক্ষুব্ধ ছিলেন, তাঁরা হঠাৎই সামনের সারিতে চলে এসেছেন।
অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে যখন কাজল শেখকে যখন গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, তখন থেকেই বোঝা গেছিল অনুব্রত-ঘনিষ্ঠরা আর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী থাকবেন না।
প্রতি পদেই তাঁদেরকে দলের মধ্যে থেকেই কোণঠাসা করা হবে। এমনকি দলীয় সদস্যদের অপমানও সহ্য করতে হবে তাঁদের। এনাদের একটি অংশ কাজল শেখের প্রতি বিশ্বস্ততা দেখাতে শুরু করলেও বিশেষ কিছু তৃণমূল সদস্যের প্রতি কিন্তু নিত্য-নৈমিত্তিক নির্বিকারত্ব নীতি প্রয়োগ করেছেন কাজল শেখ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা।
খয়রাসোল ব্লকের সভাপতি কাঞ্চন অধিকারী এই দলীয় কোন্দলের নতুন শিকার। নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এই কথা তিনি স্বীকার করেছেন।
কাজল শেখের সঙ্গে যে তাঁর সম্পর্ক মধুর নয়, সেটা বোঝা গেছিল গত শনিবারও, যেদিন খয়রাশোলে জেলা সভাপতি কাজল শেখের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি গরহাজির ছিলেন। তাঁর এই গরহাজির হওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হতেই আজ রবিবার নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন উনি।
জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে যে, ব্লক সভাপতি পদে রদবদল দলের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন উঠছে।
২০২২-এর মধ্যভাগ অবধি বীরভূম যদি বিরোধীদের কথা অনুযায়ী, ‘অনুব্রত রাজ’ হয়ে থাকে, তাহলে ২০২৩-এর মধ্যভাগে পৌঁছে কি বলা যেতে পারে এখন বীরভূমে ‘কাজল শেখ রাজ’ চলছে? তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে ব্যক্তি-নির্ভর রাজনীতি দিয়ে কি বিজেপি-র মতো শৃঙ্খলিত প্রধান বিরোধী দলের আগ্রাসী মনোভাবকে কি প্রতিরোধ করতে পারবে?
Comments