নতুন সংসদ ভবনে আজ ২১শে সেপ্টেম্বর দর্শক আসন থেকেও উঠলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে জয়ধ্বনি।
এতকাল যে সংসদ ভবন, আজ যার গালভরা নাম সংবিধান ভবন), ছিল, সেখানে উঁচুতে দর্শকদের আসনে বসবার জন্যে অনুমতি দেওয়া হতো, তাঁদের উপরে করা নির্দেশ থাকতো যে নীরব থাকতে হবে। কোনো শব্দ করে সাংসদের বক্তব্য পেশের সময়ে স্লোগান হেঁকে, বা প্ররোচনামূলক কথা বলে বিব্রত বা বিরক্ত করা যাবে না।
পরাধীন ভারতে, ৮ই এপ্রিল ১৯২৯-এ ওই সাংসদেই অধিবেশন চলবার সময়ে হিন্দুস্থান রিপাবলিক পার্টির নেতা ভগত সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত নিচে নিরীহ বোমা ছুঁড়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সাংসদদের ভয় পাইয়ে দেন। ভগত সিং তাঁর কাজের কারণ হিসেবে জানিয়ে ছিলেন যে আবেদন নিবেদন যাদের কানে পৌঁছায় না, তাদেরকে বিস্ফোরণ ফতিয়ে জাগাতে হয়। তার পর থেকেই সংসদ ভবনে অধিবেশন চলাকালীন দর্শক গ্যালারিকে শান্ত রাখবার অলিখিত দায়িত্ব নিরাপত্তা কর্মীদের।
সেই সংসদের বাইরে আজ ভগত সিং-এর মূর্তি রয়েছে বটে, কিন্তু সময় বদলে গেছে। অন্তত রাজ্যসভার সদস্য জ্যা বচ্চন তাই মনে করেন। কারণ, তিনি এবং কোনো বর্ষীয়ান রাজ্যসভার সদস্য স্মৃতিতেও আনতে পারেন না যে অধিবেশন চলাকালীন রাষ্ট্রনেতার নামে স্লোগান ভেসে আসবে দ্রক গ্যালারি থেকে।
আজ ব্রহস্পতিবার,২১শে এপ্রিল ২০২৩, অব্যবস্থার এক নতুন এক ইতিহাস রচিত হল। নরেন্দ্র মোদীর নামে এক মহিলা দর্শক স্লোগানে ভরিয়ে তুললেন রাজ্যসভার অধিবেশন কক্ষ।
জানা যাচ্ছে, এই মহিলা দর্শক বিজেপি-এর এক স্থানীয় নেত্রী, যিনি ‘উৎসাহী হয়ে রাজস্থান থেকে আজ নতুন সংসদ ভবনে ‘ঘুরতে’ এসেছিলেন।
অত্যুৎসাহী মহিলা জয়ধ্বনি দিয়ে ওঠেন নরেন্দ্র মোদীর নামে। বিজেপি-র অধিকাংশ সদস্য-সদস্যার মতো উনিও মনে করেন যে মন্ত্রীসভায় সংখ্যাধিক্যের জোরে মহিলা সংরক্ষণ বিল অনুমোদনের সব ‘কৃতিত্ব’ নরেন্দ্র মোদীর।
তবে বিরোধীরা এই অভূতপূর্ব ঘটনায় নিন্দাই জানালেন সর্বসমক্ষে। স্পষ্টবক্তা জয়া বচ্চন তো সরাসরি অভিযোগ জানালেন যে বিজেপি থেকেই উদ্যোগ করে মহিলা সমর্থকদের সংসদ ভবনে নিয়ে আশা হয়েছে।
মহিলা আচমকা চেঁচিয়ে উঠলেন "মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়" বলে। আর তারপরে চেঁচিয়েই গেলেন। সংসদ টিভির ক্যামেরাও তাক করে রাখে সেই বিচক্ষণহীন, আবেগপ্রবণ মহিলাকে যিনি হয়তো বা বিজেপি-র বিশ্বস্ত সেনানীও হতে পারেন।
বিরোধী দলের সাংসদরা তীব্র ভাষায় নিন্দা জানায় এবং বিজেপি-কে দোষারোপ করে সংসদ টিভি-র কতৃপক্ষদের, যারা এই অন্যায়টিকে প্রশ্রয় দেন অনাবশ্যকভাবে ।
তবে সংখ্যাধিক্যর দাপট বজায় রাখা ছাড়া আর কিছুই যারা ভাবেন না, তাঁদের কান দিয়ে এই নিন্দা কি হৃদয়ে প্রবেশ করবে?
Kommentare