top of page

“ওবিসি সংরক্ষণ আগে নিশ্চিত না হলে মহিলা সংরক্ষণ বিল অসম্পূর্ণই রয়ে যাবে,” রাহুল গান্ধী


প্রত্যাশামতোই ৪৫২টি ভোটে লোকসভায় পাস হয়ে গেল মহিলা সংরক্ষণ বিল। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন মাত্র দুই সাংসদ।


তবে ঝাঁঝালো পিঁয়াজের খোসার মতো সংসদের বিশেষ অধিবেশনে এক এক করে খুলে যাচ্ছে ভারতীয় রাজনীতির গভীর পরতগুলি। যে নাটকীয় চমক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহিলা সংরক্ষণ বিলটিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভাকে দিয়ে দুই দিন আগে অনুমোদন করিয়ে নিলেন, তা যে আড়ম্বরেরই একটি অংশ তা ক্রমশ দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে।


এই বিলের প্রতি আজ ২০শে সেপ্টেম্বর বিরোধী দলগুলিও সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে এই বিলটির আইনি এবং রাজনৈতিক জটিলতাগুলিকেও অধিবেশনে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে বিরোধী নেতৃবৃন্দ।


কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী আজ নতুন সংসদ ভবনে সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে দাবি জানিয়েছেন যে এসসি, এসটি এবং ওবিসি-দের প্রতিনিধিত্বমূলক নীতিগুলিকে এখনই কার্যকর করতে হবে। নিজের বক্তব্যে উনি বলেছেন, “আমি এখানে দাঁড়িয়ে ‘নারী শক্তি অধিনিয়ম বন্দন অধিনিয়ম’-কে সমর্থন জানাচ্ছি। তার কারণ, মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আরো বিলম্ব করলে তা ভারতীয় নারীদের প্রতি অবিচার হবে।“


এই প্রসঙ্গে সোনিয়া গান্ধী দাবি করেন যে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি মহিলাদের জন্যে সংরক্ষণ নিশ্চিত করবার জন্যে আগে একটি কাস্ট সেনসাস প্রয়োজন। এই সেনসাসের দাবিটি নিয়েই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সংসদ অধিবেশনে নিজের বক্তব্যে পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে আলোচ্য মহিলা সংরক্ষণ বিলটি তাঁর চোখে ‘অসম্পূর্ণ’ কারণ এখনও অবধি ওবিসি মহিলাদের জন্যে সংরক্ষণ কার্যকর হয়নি।


তথাকথিত ‘নারী শক্তি অধিনিয়ম বন্দন অধিনিয়ম’-এর স্বপক্ষে নিজের বক্তব্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন যে মহিলা সংরক্ষণ বিলটি আইনে পরিণত হলে একটি নতুন যুগ শুরু হবে।

বিরোধী দলগুলির বিলটি সমর্থন করছে। কিন্তু তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট। এই বিল এবং সংশ্লিষ্ট আইনগুলি বলবত না হলে এই বিল আরেকটি গালভরা নাম নিয়েই কাগজে রয়ে যাবে। কারণ এর আনুষঙ্গিক যে ডিলিমিটেশন (সীমানির্দেশ) বিষয়ক জটিলতাগুলি রয়েছে তা সমাধান করেই এই সংরক্ষণ কার্যকর হতে পারে।


এনডিএ-র একদা শরিক শিরোমণি আকালি দলের সাংসদ হরসিমরাত কাউর এই বিলটিকে বিজেপি-র আরেকটি ‘জুমলা’ ছাড়া আর কিছু বলতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “যখন জানা গেল মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে, মনে আশা বাড়লো। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেল কারণ ‘ডিটেলস ইন দ্য ডেভিলস’ (এর বিবরণেই গণ্ডগোল কুকিয়ে রয়েছে)। এখন বোঝা যাচ্ছে, এই বিলে যা যা বলা হয়েছে, তা দেশের পরবর্তী জনগণনা (২০২৬-এ হওয়ার সম্ভাবনা আছে) এবং ডিলিমিটেশন না হলে কোনোভাবেই আইনি পদ্ধতিতে কার্যকর করা যাবে না।“


তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মিত্র জানতে চান সরকারের ‘সংখ্যা গোনা’ এবং ‘সীমারেখা টানা’-র জন্যে এই বিলটি কার্যকর হওয়ার জন্যে অপেক্ষায় থাকবে?


অন্যদিকে, এআইএমআইএম-এর সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়েইসি লোকসভায় এই বিলটি বিরোধিতা করে জানান যে বিলটি ‘এক্সক্লুসিভ’ (বাধাদায়ক) এবং ‘অ্যান্টি-মুসলিম উইমেন’ আইন।


এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে বিলটিকে সমর্থন করেন তাঁর দলের পক্ষ থেকে। তবে তিনি পাশাপাশি এসসি, এসটি এবং ওবিসি-দের সংরক্ষণের জন্যে সাংবিধানিক সংশোধনের দাবি জানান।


ডিএমকে নেত্রী কানিমোঝি মহিলাদের সমানত্ব দাবি করে বলেন যে বিলটির ড্রাফট থেকে ‘আফটার ডিলিমিটেশন’ (সীমানির্দেশের পরে) – এই দুটি শব্দকে কেটে দেওয়া হোক। কারণ, এই আইনি জটিলতার কারণেই বিলটি আইন হয়ে কার্যকর হতে অনাবশ্যক বিলম্ব ঘটতে পারে।


প্রসঙ্গত, মহিলা সংরক্ষণ বিল (যাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘নারী শক্তি অধিনিয়ম বন্দন অধিনিয়ম’নামে অভিহিত করেছেন) স্পষ্ট বলছে যে লোকসভা এবং বিধানসভায় ৩৩ শতাংশ আসনে মহিলাদের জন্যে সংরক্ষণ আইনি পদ্ধতিতে বলবত হবে আগামী জনগণনা এবং ডিলিমিটেশনের পরেই।

Comments


bottom of page