১ বছর ১০ মাস পর ফের ঘরওয়াপসি হল অর্জুন সিংয়ের। শুক্রবার দিল্লিতে আবারও পদ্ম-ফুলে যোগ দিলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ। পদ্ম শিবিরে ফিরেই তৃণমূলকে নিশানা করেছেন তিনি।
বিজেপি কার্যালয় বসে অর্জুন সিং বলেন, ‘২০২১ সালে যেভাবে ভোট পরবর্তী অশান্তি বাংলায় হয়েছে, যেভাবে খুন রাহাজানি হয়েছে সেখানে সবথেকে বেশি আমার এলাকায় লোকজন অত্যাচারিত হন। বিজেপি কর্মীদের বাঁচাতে অল্প সময়ের জন্য আমাকে দল থেকে দূরত্ব রাখতে হয়েছিল। খুব কষ্ট করে তাঁদের রক্ষা করতে হয়েছে। তবে বাংলায় তৃণমূলের সরকারের এসব নিয়ে কিছু আসে যায় না। ক্ষমতায় থাকতে পুলিশকে কাজে লাগিয়ে অত্যাচার করতে জানে ওরা। সন্দেশখালি তার প্রমাণ। প্রতি বিধানসভায় এরকম সন্দেশখালি আছে। প্রতিবাদ করতে পারবেন না কেউ। এমন অত্যাচার বিশ্বে কোথাও হয় না।’ সাংসদের সাফ দাবি, সন্দেশখালির ঘটনার পর তিনি বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রশংসা করে অর্জুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাংলাকে বাঁচাতে চান সবরকমভাবে। চেষ্টাও করছেন। তাঁর হাত ধরেই বাংলা উদ্ধার হবে আগামিদিনে।’
টিকিট না মেলায় ২০১৯ সালের মার্চ মাসে জোড়া-ফুল ছেড়েছিলেন অর্জুন সিং। ব্যারাকপুর লোকসভা আসন থেকে লড়াই করেন বিজেপির প্রতীকে। পরাজিত করেছিলেন সেবার ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে। এরপর তিন বছরের বেশি সময় ওই দলেই ছিলেন তিনি। এর মধ্যেই একুশের বিধানসভা ভোটে ভাটপাড়ায় অর্জিন-পুত্ পবন সিং জয় পেলেও রাজ্যব্যাপী বিরাট পায় জোড়-ফুল শিবির। ব্যারাকপুর লোকসভার অন্তর্গত সাতটির মধ্যে ছ’টি বিধানসভাতেই জেতেন তৃণমূল প্রার্থীরা। পাশাপাশি, ভাটপাড়া পুরসভা সহ ওই এলাকায় নানা দুর্নীতির অভিযোগে সাংসদ ঘনিষ্ঠদের নাম জড়ায়। অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধেও মামলা হয়।
এর কিছুদিন পর থেকেই চট শিল্পের উন্নয়ন নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছিল ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদকে। ক্রমশই সেই সুর বাড়তে থাকে। এরপর বিজেপিরকে ‘ঠান্ডা ঘরের দল’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের কাজেরও প্রশংসা শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। তারপরই ফুল বদল করেন অর্জুন। ২০২২ সালের মে মাসে বিজেপি সাংসদ যোগ দেন তৃণমূলে। তাঁকে উত্তরীয় পড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন, খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলে অবশ্য স্বস্তিতে ছিলেন না এই প্রতাপশালী নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে ময়দানে নেমেছিলেন জগদ্দলের তৃণমূলেরই বিধায়ক সোমনাথ শ্যামেরা। নাজেহাল অবস্থা হয় সাংসদের।
১ বছর ১০ মাস কাটতে না কাটতেই ছন্দপতন। ফের ব্যারকপুর থেকে তাঁকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। অসন্তুষ্ট অর্জুন সিং। অর্জুন সিংয়ের দাবি, ২০২৪ সালের ভোট ব্যারাকপুর থেকেই তাঁকে টিকিট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তৃণমূলের তরফে। তাই দলবদল করেছিলেন তিনি। তৃণমূল নেত্রীর জানিয়ে দেন, ‘উনি (অর্জুন সিং) বিজেপির সাংসদ, আমাদের ওই কেন্দ্রে প্রার্থী মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। অন্যদের যেই দাঁড়াক আমরা রাজনৈতিকভাবে লড়াই করব।’
এরপর তৃণমূল ছেড়ে ব্যারাকপুর থেকেই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা করেন অর্জুন। জল্পনা ছিল তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার। যার অবসান বৃহস্পতিবারই করে দেন সাংসদ। জানিয়েছিলেন বিজেপিতেই যোগ দিচ্ছেন। অর্জুন সিংয়ের সঙ্গেই বিজেপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন তমলুকের বিদায়ী সাংসদ তথা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী।
এদিকে নিজের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর আহত হওয়ার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনের নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় কোনও ত্রুটি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্রর খবর।
Comments