গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বসে আছেন ক্লিষ্ট, রুষ্ট চাকরিপ্রার্থীরা, দিন গুনতে গুনতে প্রায় তিন বছরের দোরগোড়াতেও বিক্ষোভে অনড় হয়ে বসে আছেন। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে, সরকার আয়োজিত প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলিতে উতরে মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তাঁরা।
অথচ, নিয়োগ পাচ্ছেন যারা, তাঁদের যোগ্যতা দুটি – হয় তাঁরা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের পুত্র, কন্যা বা আত্মীয় এবং চাকরি পাবার জন্যে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাঁদের।
এই বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা আদালতে ওঠবার পরে বিচারপতিরা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে নিযুক্ত করে। বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী থেকে শুরু করে আমলাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ একত্রিত করে আদালতে পেশ করবার পরে বেশ কিছু চাকরিজীবীকে তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করবার নির্দেশ দেন বিচারপতিরা।
সেই প্রমানের ভিত্তিতেই উত্তরবঙ্গে ববিতা সরকারের মতো প্রভাবশালী মেয়ের শুধু চাকরিটাই গেল না। মাইনে হিসেবে তিনি যে টাকা সংগ্রহ করেছিলেন, তা ফেরতও দিতে হয় তাঁকে। ববিতা সরকারের চাকরিটি পাবার কথা ছিল অনামিকা রায় নামে মেধাতালিকা অনুযায়ী স্বীকৃত এক যোগ্য চাকরিপ্রার্থীর।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থীদের নম্বরের তালিকা প্রকাশ করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেখানে দেখা গিয়েছে ববিতা সরকারের মোট প্রাপ্ত নম্বর ৭৭। তার মধ্যে অ্যাকাডেমিক নম্বর ৩১ সংখ্যাটিকে বদলে ৩৩ করা হয়।
সেই নম্বর কমে তালিকার নীচের দিকে তার নাম চলে যায়। ববিতার পরের নাম ছিল অনামিকার রায়ের। তাই ববিতার চাকরিটা তিনি পান।
অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো, চার মাস কেটে যাওয়ার পরেও অনামিকা রায়ের নিয়োগপত্র আসেনি। তথ্য বলছে, প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর, মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর ৪৩ মাসের উপার্জিত বেতন পেয়েছে ববিতা সরকার। এরপর বেতন বাবদ ও পান জলপাইগুড়ির অনামিকা রায়।
ববিতা সরকার সেই টাকা নিলেও পরে তা দিতে হয় অনামিকাকে। চাকরি হারানোর পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মাইনে বাবদ ১৫.৯২ লক্ষ টাকা অনামিকার হাতে তুলে দেয় ববিতা সরকার।
এই উদাহরণ হিমশৈলের চুড়ামাত্র। নিয়োগকর্তা যে সরকার, তাঁদের এমন ‘ভুল’ ইচ্ছাকৃত যে নয় তা আদালতে প্রমানের অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো ‘ভুলের পর ভুল’ করে যাওয়ার পরেও আদালতের পর্যবেক্ষণে থাকবার পরেও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি নিজেদের ‘ভুল’ শোধরাতে এত দেরি করছেন কেন?
অনামিকা আজও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে সরকারী নিয়োগপত্র পাননি। এ কি শুধু উচ্চ-আদালতেরই অবমাননা? শিক্ষক হওয়ার জন্যে এতদিন জানা ছিল মেধাটাই আবশ্যিক। কিন্তু গত চার মাসে সরকারেরর পক্ষ থেকে যে ধরণের নিস্ক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, তা কি মেধার পরিবর্তে ‘আমরা-ওরা’র অযৌক্তিক লড়াইয়ে পক্ষ নির্ধারণটাকেই চাকরির যোগ্যতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ারই এক নির্মম প্রয়াস?
অনামিকা উত্তর খুঁজছেন। গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থানরত মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত ক্ষুব্ধ, ক্লিন্ন কিন্তু অসীম ধৈর্যশীল চাকরিপ্রার্থীরাও।
Comments