ধরনা নিয়ে সরগরম বাংলার রাজনীতি। একদিকে ১০০ দিনের কাজের টাকার দাবিতে, রাজভবনে অভিষেকের ধরনা, অন্যদিক্ পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে, রাজ্যের মন্ত্রী বিধায়ক ও বর্তমান ও প্রাক্তন পুরপ্রধানের বাড়িতে একযোগে সিবিআই হানা। আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে দু'বার। স্বাভাবিক কারণেই, রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছেই। চলছে দু পক্ষের বাকযুদ্ধ। কিন্তু মূল প্রশ্নটা হল, ধরনার কারণে সিবিআই তল্লাশি নাকি ইডি-জেরা এড়াতেই অভিষেকের ধরনা?
তৃণমূল দলের অভিযোগ, অভিষেকের রাজভবন ধরনার পাল্টা হিসেবে সিবিআইকে ব্যবহার করছে বিজেপি। পালটা বিজেপির দাবি, ইডির জেরা আটকাতেই চলছে ধরনার নাটক। বিবৃতি পোস্ট পালটা বিবৃতিতে জমে গেছে রাজনীতি।
রাজভবনের সামনে তৃণমূলের ধরনা। শুরু হয় ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায়। ৫অক্টোবর পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআই তল্লাশি। একযোগে উত্তর ২৪ পরগণার ১২ জায়গায়। কামারহাটি বরানগর টিটাগড় থেকে দক্ষিণ দমদম পুরসভায়। বর্তমান ও প্রাক্তন পুরপ্রধান ও উপ পুরপ্রধানের বাড়িতে। বাদ যাননি রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষও। ৪৮ ঘন্টা কাটতেই ফের আজ সকাল থেকে শুরু সিবিআই তল্লাশি। এবার আরেক মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও বিধায়ক মদন মিত্রের বাড়িতে। জানানো হয়েছে, পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআই তল্লাশি চলছে। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হালিশহর এবং কাঁচরাপাড়ায় সিবিআইয়ের দল পৌঁছে গিয়েছে। তল্লাশি চলছে, নিউ ব্যারাকপুরের প্রাক্তন পুর প্রধান তৃপ্তি মজুমদারের বাড়িতেও। সেখানেও পৌঁছে গিয়েছে সিবিআই।
রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া বেতনের দাবিতে দিল্লি গিয়েছিলেন অভিষেক সহ তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। বিজেপির দাবি, ১০০ দিনের কাজের কারও বেতন আটকানো হয়নি। ভুয়ো জব কার্ড দেখিয়ে লুঠ করা হয়েছে গরীবের পারিশ্রমিক। দায়ী তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। তৃণমূলের দাবি দিল্লিতে মন্ত্রীরা দেখা করেনি তাঁদের সঙ্গে বরং ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিয়েছে কৃষিভবন থেকে। পালটা কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী স্বয়ং কলকাতায় এসে জানিয়েছেন, তিনি অপেক্ষায় ছিলেন কিন্তু তৃণমূল দফায় দফায়, তাঁদের সিদ্ধান্ত বদলেছে। তাঁরা ১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে কথা বলার থেকে, নাটক করতে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। তৃণমূলের বক্তব্য মন্ত্রী দেখা না করায়, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি রাজ্যপালকে নিতে হবে ডেপুটেশন। যদিও তখন রাজ্যপাল উত্তরবঙ্গে। তিস্তার ধ্বংসলীলায় উদ্ধার কাজে। তারপরই রাজভবনের সামনে ধরনায় বসেন অভিষেক। তারপর দিনই রাজ্যে সিবিআই তল্লাশি পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা পুরসভাগুলিকে। আদালতের নির্দেশে চলছে তল্লাশি। তৃণমূলের দাবি ধরনার সাফল্যে ভয় পেয়ে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেখাতেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে নামানো হল ময়দানে। পিছনে রয়েছে বিজেপি। পালটা বিজেপির দাবি, আদালতের নির্দেশে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই ইডি জেরা এড়াতেই রাজভবনের সামনে ধরনায় বসেছেন সাংসদ।
তৃণমূলের তরফ থেকে সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করা হয়, "জনগণের শক্তি, ক্ষমতায় থাকা মানুষের চেয়ে শক্তিশালী। আমরা কারও কাছে মাথা নত করব না। অন্যদিকে কুনাল ঘোষ বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না হিট। বিজেপির ওপর চাপ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীকে আসতে হয়েছে। তাতেও ফলশূন্য। রাজ্যপাল কোণ ঠাসা। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখন নজর ঘোরাতে রাজনৈতিক পরিকল্পনায় আবার নামানো হলো এজেন্সিকে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাই বিজেপির আত্মরক্ষার অস্ত্র।" এখন দেখার এই রাজনৈতিক চাপানউতোরে বাংলায় আসে কিনা ১০০ দিনের কাজের বকেয়া, আর পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলা কত তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারে সিবিআই!
コメント