কিছু রহস্যের সমাধান মেলা ভারত। যেমন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি বেছে বেছে কেন ঠিক সেইদিনগুলিতেই হাজিরার জন্যে সমন পাঠায়, যেদিনগুলিতে তৃনমূল কংগ্রেসের ঘোষিত কর্মসূচী থাকে? গত ১৩ই সেপ্টেম্বর যেমনটা ঘটেছিল, ঠিক তেমনটাই দেখা গেল ৩রা অক্টোবরের ক্ষেত্রে।
১৩ই সেপ্টেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লীতে INDIA-র বৈঠকে না গিয়ে ইডি-র দপ্তরে হাজিরা দিলেন। কিন্তু আজ ৩রা অক্টোবর তা ঘটলো না।
দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ মাসে ইডি-র দফতর থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চারবার সমন পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ক্ষেত্রে তিনি হাজির হয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করেছেন, কিন্তু দুবার করেননি।
প্রশ্ন হল, এই ভারসাম্য রক্ষা করাটাও কি একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা? অনেকে বলছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ইডি-র সঙ্গে সহযোগিতা করা আর না করবার মধ্যে তিনি একটি স্পষ্ট বার্তা পৌঁছাতে চাইছেন। ভারতের এক দায়িত্বশীল নাগরিক এবং সাংসদ হিসেবে তিনি তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করবেন বটে। তবে তাঁকে ইচ্ছেমত নাচানো যাবে না।
গত ১৯শে মে সিবিআই যখন নিজাম প্যালেসে প্রায় দশ ঘণ্টা ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন বাঁকুড়াতে তৃণমূলের একটি সভায় তাঁর বলবার কথা ছিল। তাঁর পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানকার মানুষদের উদ্দেশ্যে একটি ভার্চুয়াল ভাষণ দিয়েছিলেন।
এমনটা নয়, সিবিআই-এর মুখোমুখি হতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পাচ্ছেন। বিরোধীদের এই তির্যক মন্তব্য উপেক্ষা করেও বলা যায় যে তৃণমূলের ঘোষিত কর্মসূচী বানচাল করবার জন্যে ঠাণ্ডা ঘরে বসে যে পরিকল্পনা করা হয়, মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তা বিগড়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না।
সেই দশ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদের পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তদন্ত প্রক্রিয়ায় তাঁকে যে এতক্ষণ আটকে রেখে দেওয়া হল, তার “নির্যাস শূন্য। ওদের সময় নষ্ট। আমারও তাই।“
জুন মাসের ৮ তারিখেও এক ঘটনা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ চলাকালীন তাঁকে সমন পাঠায় ইডি। নদীয়ায় কর্মসূচী থামাননি তিনি। নদীয়া থেকেই জানিয়ে দেন যে নষ্ট করবার মতো সময় তাঁর যাতে নেই। সমন অগ্রাহ্য করে উনি স্পষ্ট বলে দেন যে পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটে গেলে উনি ইডি-র দফতরে আসবেন।
এরপরে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি যখন তাঁকে ডেকে পাঠায় ইডি, তখন শরদ পাওয়ারে আহ্বান করা INDIA-র বৈঠকে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। বিরোধী জোটের সদস্যরা বিজেপি-র ‘নিকৃষ্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ উপলব্ধি করতে পারেন। তাই তাঁরা বইথকের সময়ে অভিষেকের জন্যে একটি ফাঁকা চেয়ার রেখে জানিয়ে দেন যে তাঁরা ইডি-র সঙ্গে এই অসম লড়াইয়ে অভিষেকের পাশে আছেন।
বিজেপি-র সদস্যরা অবশ্য মনে করছেন যে, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এমন কোনো নেতা নন, যার জন্যে আমরা ভেবে সময় নষ্ট করবো।“ সিপিআই(এম)-এর পক্ষ থেকে বরাবরই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে যে, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি-র ডাকা আসলে বিজেপি আর তৃণমূলের সাজানো চিত্রনাট্য।“
তবে ইডি-র মতো শক্তিশালী কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার সম্মুখীন হওয়ার সমান্তরালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃনমূল কংগ্রেসের সদস্যদের অনেকটা বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছেন এই ভারসাম্যে তাঁর যে পরিণতবুদ্ধি আরও পরিণত হচ্ছে, তা আরেক বৃহৎ ষড়যন্ত্রকে প্রতিরোধ করবার মানসিকতাকেই দৃঢ়তর করছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
Comments