সম্প্রতি অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি নতুন করে গঠন করা হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবার উঠে এলো আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তদন্ত কমিটির ৪৬ পাতার রিপোর্টে প্রমাণ মিললো, ৩৬ জন পড়ুয়া এই প্রথম বর্ষের ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। রিপোর্টে এই পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই ১৩৬ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৬ জন প্রাক্তন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানোর সুপারিশ করেছে কমিটি। এবং জানিয়েছে প্রশাসন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চিরকালের জন্যে বহিষ্কার করবার পদক্ষেপ নেয়।
১৩৬ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৫ জন পড়ুয়াকে এই মৃত্যুর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকবার প্রমানের ভিত্তিতে আগামী ৪-টি সেমেস্টার পরীক্ষা না দিতে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাদেরকে হোস্টেল থেকে বহিষ্কার করবারও সুপারিশ করেছে এই কমিটি।
অভিযুক্ত পড়ুয়াদের মধ্যে ১১ জনকে দুটি সেমেস্টারের পরীক্ষা না দিতে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হোস্টেল থেকে চিরকালের মতো বহিষ্কারের সুপারিশকরা হয়েছে রিপোর্টে।
অভিযুক্ত ১৫ জন পড়ুয়ার জন্যে কমিটি সুপারিশ করেছে যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন একটি সেমেস্টারের পরীক্ষায় বসবার অনুমতি না দেয়। এই ১৫ জনকে হোস্টেল থেকে বহিষ্কারেরও সুপারিশ করেছে কমিটি।
তদন্ত কমিটির এই কঠোর সুপারিশগুলি প্রশাসন কীভাবে এবং কতটা কার্যকর করে তা আগামী দিনে জানা যাবে। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো যে এই সুপারিশগুলির মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাছে র্যাগিং বন্ধ করবার যে বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার সদিচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে, ক্যাম্পাসে বা হোস্টেলে তা সঞ্চারিত হবে কিনা, তা সময়সাপেক্ষ।
স্বপ্নদীপ কুণ্ডু র্যাগিং-এর শিকার। তবে তার চেয়েও আরো অস্বস্তিকর হল যে মেধাবী স্বপ্নদীপ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ঘরের সন্তান। দেখা যাবে, র্যাগিং-এর শিকার হওয়া ছাত্রদের মধ্যে এই শ্রেনীর ছাত্রদের উপরে সবচেয়ে বেশি কোপ পড়ে।
এছাড়াও, বিশেষ রাজনৈতিক, বা বলা ভালো, কিছু স্বঘোষিত ছাত্রনেতাদের ব্যক্তিগত প্রবৃত্তিগুলিকে এই শ্রেণীর ছাত্রদের দিয়েই চরিতার্থ করবার চেষ্টা চলে। এই বিকৃত রুচির প্রাক্তন পড়ুয়ারা নিজেদের পরিচিতির ক্ষমতা দিয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষের অন্য ছাত্রদের প্রভাবিত করে এই র্যাগিং পর্বটি চালিয়ে যায়।
প্রশ্ন হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটি এবং ছাত্রসমাজ এই স্বঘোষিত রাজনৈতিক দাদাদের জুলুম আগামী দিনে বরদাস্ত করবে কিনা?
উত্তর ইতিবাচক হলে র্যাগিং কমবেই।
Comments